Tuesday, November 11, 2014

শিবনারায়ন দাশ - ইনি কে?


লোকে বলে তিনি স্বভাব আঁকিয়ে ছিলেন। উত্তাল সেই সময়ের ছাত্রনেতাও ছিলেন। ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণও করেন। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
১৯৭০ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ৪০১ নং (উত্তর) কক্ষে তিনি একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্নে পতাকার ডিজাইন করেন। এক রাতের ভেতর। সেই রাতেই নিউমার্কেট এলাকার বলাকা বিল্ডিংয়ের ৩ তলার ছাত্রলীগ অফিসের পাশে নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্সের টেইলার্স মাস্টার খালেক মোহাম্মদী পতাকার নকশা বুঝে কাজ শুরু করেন। একটি লাল সবুজের পতকার জন্ম হয়। তার নাম শিব নারায়ন দাশ, কতজন শুনেছি তার নাম? এটি বিশাল প্রশ্ন।
সেই পতকাটি পটূয়া কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জন হয়েছে, কিন্তু এতে শিবনারায়ন দাসের নামটি কিভাবে যেন হারিয়ে গেলো। নীচের লেখাটি আরেকটি উত্তাল সময়ের। শিব নারায়ন দাস এসেছিলেন সেই উত্তাল শাহবাগে।
নিজের মতো করে লিখে ফেললাম প্রলয় দা। হা, প্রলয় হাসানের সাথে দেখা হয়েছিলো শিব নারায়ন দাশের। বিজ্ঞ প্রলয় চকিতে চিনে ফেললেও পাশ থেকে কেউ প্রলয় হাসান কে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন - 'ইনি কে?' প্রলয় হাসান উত্তর দিলেন- 'ইনি হচ্ছেন শিব নারায়ন দাশ। বাংলাদেশের প্রথম পতাকার ডিজাইনার।' শিব নারায়ন দাশ সেটা শুনে ফেলে ক্ষোভ মিশ্রিত কন্ঠে বল্লেন - 'না না, আমি কেউ না।' প্রলয় হাসান বললেন - 'শিবুদা আমরা জানি আপনার অনেক অভিমান..." তিনি প্রলয় কে থামিয়ে দিয়ে বল্লেন - 'না না, আমার কোন অভিমান নেই। কার উপর অভিমান? কিসের অভিমান?'
গতকাল জাতীয় স্মৃতিসৌধ স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন মারা গেলেন। ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট এরশাদ যখন জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন, সে অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় ভিআইপিরা চলে যাওয়ার পর তিনি সেখানে গিয়ে জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন। স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পর কারা যেন বেনামি চিঠি দিয়ে তাকে খুন করতে চেয়েছিল। তারপর পত্রিকায় ইচ্ছা করে তার নাম ভুল লেখা হয়েছিল। নকশার সম্মানী বাবদ ২ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তার আয়কর ধরা হয়েছিল ৫০ শতাংশ, মানে ১ লাখ।
মাইনুল হোসেন মারা গেলেন মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে। শিব নারায়ন দাশ অভিমান নিয়ে নিভৃতে আছেন। হুমায়ন আজাদ সঠিক কথাটি বলেছেন , "বাঙালী জীবিত প্রতিভাকে লাশে পরিণত করে, আর মৃত প্রতিভার কবরে আগরবাতি জ্বালে"

File:Flag of Bangladesh (1971).svg
মৃত্যুর পর হয়তো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়া হবে, প্রতিটি মৃত্যুবার্ষীকিতে বিবৃতি, মৃত্যুতে গভীর শোক। আর বেঁচে থাকবে অভাব জরা ব্যধি আর একরাশ অভিমান নিয়ে। অদ্ভুত এক জাতি আমরা। স্মৃতিসৌধ কিংবা জাতীয় পতাকা যারা দিয়ে গেলো, তাদেরকে চিনিই না। অদ্ভুত!

1 comment:

  1. আমারা বাঙ্গালীরা এমনিই হই.........আফসোস নিজেদের যে কবে আমরা পরিবর্তন করব তা জানি না

    ReplyDelete