Tuesday, November 18, 2014

মোস্তাকনামা অথবা জনপ্রিয় বাঙালী হওয়ার গোপন রহস্য

খন্দকার মোশতাক আহমেদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিলো তার চোখের পানি। যে কোনো পরিস্থিতিতে কেঁদে ফেলার অপূর্ব ক্ষমতা ছিলো তার। আর এতে অন্যরকম এক মাত্রা পেতো তার অকপট মিথ্যেগুলো। শ্রোতাকে স্পর্শ করতো, তারা আবেগাক্রান্ত হতো। এবং এক পর্যায়ে মোশতাক ভাই বলে জড়িয়ে ধরতো তাকে। আমরা আপনার সঙ্গে আছি মোশতাক ভাই- এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বেরুতো তারা। পরস্পরকে বলতো, মোশতাক ভাই মানুষটা ভালো, বড্ড আবেগী। ইমোশনাল মানুষ। বলতে বলতে তারা ছুরি মেরে যেতো সহযোদ্ধাদের পিঠে। আপাদমস্তক সাইকো মোশতাকের আরেকটি গুণ ছিলো সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। আওয়ামী লীগের ছোটবড় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে মিশতো। এবং সবার কানেই ঢালতো বিষ। চোখে হানি মুখে বিষ, মোশতাকের গোপন সাধ ছিলো বঙ্গবন্ধুর জায়গা নেওয়া। ইতিহাস বলে সে অনেকখানি সফল হয়েছিলো। আগামসি লেনের নির্জন বাড়িটায় ধুকতে ধুকতে মরার আগ পর্যন্ত তার মনে একটাই প্রশান্তি ছিলো, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলো সে।
হ্যা খন্দকার মোশতাক আহমেদও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছিলো। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহনে স্টেজে ছিলো। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলো। এবং এই মোশতাক প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ এবং পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস তৈরিতে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছিলো। এতটাই যে এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সিংহভাগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকলেও তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্ব মানতে নারাজ হযে পড়েছিলো। তারা মুক্তিযুদ্ধ চায়, তাজউদ্দিনকে চায় না। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছিলো। আর সেই স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগে একঘরে একা হয়ে পড়েছিলেন তাজউদ্দিন। হযরত ওমর (রাঃ)যেমন খালেদ বিন ওয়ালিদকে ডেকে বলেছিলেন,খালেদ তোমাকে আর সিপাহসালার হিসেবে রাখা যাচ্ছে না, লোকে যেভাবে তোমার নাম নিচ্ছে, তোমার বীরত্বের জয়গান গাইছে তাতে তারা আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছে…। পিঠে অসংখ্য ছুরি নিয়ে রক্তাক্ত তাজউদ্দিন কোনঠাসা হয়ে পড়ে ছিলেন। সফল হয়েছিলো মোশতাক আহমেদ।
খন্দকার মোশতাক আহমেদও বঙ্গবন্ধুপ্রেমী ছিলো। তার মুখে মুজিব ভাই মুজিব ভাই ফেনাতোলা জপে অভ্যস্ত ছিলো আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীরা। ১৪ আগস্ট রাতেও ভাবি আজকে কি রানছেন বলে ৩২ নম্বরের রান্নাঘরে বেগম মুজিবের বেড়ে দেওয়া ভাত তরকারি নোলা ডুবিয়ে খেতে দেখা গেছে। পরদিন একই সময়ে মোশতাক বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। তার জুতোর নিচে বঙ্গবন্ধুর রক্ত। সে রক্ত মাড়িয়ে সে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা দেয়। নিজের আচকান এবং টুপিকে ঘোষণা করে জাতীয় পোষাক হিসেবে। এবং কুলাঙ্গার বাঙালি চেয়ে চেয়ে দেখে যায়, শুনে যায়। আর নিজেকে প্রবোধ দেয় যে ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতায় মোশতাক আহমেদ। এবং কবরে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধের সরকার, মুক্তিযুদ্ধ।
চোখে পানি, মুখে বিষ, আবেগী, ভালো মানুষ। খন্দকার মোশতাকরা বরাবরই জনপ্রিয় এই জাতির কাছে…

কৃতজ্ঞতাঃ অমি রহমান পিয়াল

No comments:

Post a Comment