Wednesday, November 19, 2014

একজন সঞ্জীব চৌধুরী...

তখন বিএনপির দ্বিতীয় শাসন আমল। কারো মুখ খুলবার উপায় নাই। ক্রসফায়ারে মারা যাচ্ছে মানুষ, কেউ মুখ খুলতে পারেনা। বিদ্যুত নাই, মুখ খুলবার উপায় নাই।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর চলছে অত্যাচার। পূর্নিমার কান্নার হাহাকার ভেসে যায় যমুনার জলে। পিতারা বলেন, বাবারা, একজন একজন করে আসো...
কিছু ছেলে, প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অকুতোভয় ছেলে আয়োজন করে এক কনসার্টের। ছেলেগুলি গেঞ্জি প্রিন্ট করে। নাম দেয় কনসার্ট ফর ফাইটার্স। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে, হৃৎপিন্ডস্বরূপ রাজু ভাস্কর্যে। কোন স্পন্সর নেই। ছেলেরা নিজেরাই টাকা তুলে আয়োজন করে। পুলিশি হুমকি কনসার্ট বন্ধ করে দেবার। কোন গায়ক রাজি হন না গান গাইতে।
এগিয়ে এলেন একজন মানুষ। একজন গায়ক। সঞ্জীব চৌধুরী তাঁর নাম। ঝাঁকড়া বাবরি দোলানো চুলে তিনি মাইক্রোফোন হাতে উঠে দাঁড়ান। শুরু করেন গান। চারদিকে পুলিশ ঘিরে রয়েছে। বিএনপি সরকারের পুলিশ।
গান শুরু হলো। চলছে গিটার, চলছে তবলা। আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই... জড়ো হয় মানুষ, জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। ভরে ওঠে চত্বর।
সঞ্জীব চৌধুরী বলে ওঠেন, এবার আমি বক্তৃতা দেবো। চলছে গিটার, চলছে তবলা। উনি বলেন, "বাংলা ভাই হাঁটে। বাংলা ভাইকে কেউ ধরেনা। আমি যখন বলি, তখন আমাকে ধরে। আমি বলতে চেয়েছিলাম সেই সমস্ত কথা। আমার দিকে এগিয়ে আসে উদ্যত রাইফেল, আমার দিকে এগিয়ে আসে উদ্যত বেয়নেট!"
আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই, আমার অন্তরের কথা বলতে চাই...
অন্ধকার নেমে আসে, অন্ধকার নেমে আসে সারা বাংলাদেশ জুড়ে। য়ার সেই অন্ধকারের ভেতর একজন তাজুল ইসলামকে খুন করা হয়। জানেন, তাজুল ইসলাম কে? ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ইকোনোমিক্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কখনো চাকরী নেন নাই। তিনি ছিলেন আদমজীতে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। উপপ্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন? আপনাদের কি মনে আছে? নাম বলেন!
মওদুদ আহমেদ! তিনি এখন আইনমন্ত্রী। ঐ ভালো আইন জানেন। জসীমউদ্দীনের মেয়ের জামাই। ভুলে গেছেন সবকিছু? সেই মউদুদ আহমেদ আমাদের আইন শেখায়। আপনারা এখানে বসে বসে আইন শিখবেন। একজন তাজুল ইসলামকে পিটিয়ে মারা হয়, খুন করা হয়। সাক্ষী আদমজী। একজন ভালো মানুষ মাঝরাতে বাড়ি ফিরে এলোনা।
আমি বলতে চেয়েছিলাম সে সমস্ত কথা। তখনই আমার দিকে এগিয়ে আসে উদ্যত রাইফেল। কোথায় আমার বন্ধুরা?
আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই...
আমাদের আইনমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে শান্তি রক্ষিত হোক। বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীকে ধরিয়ে দিন! আমাকে চুপ করতে হয়, আমাকে চুপ করিয়ে দেয়া হয়।
আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই, আমার অন্তরের কথা বলতে চাই...
একটা ছেঁড়া ছুটকেস থেকে, একটা ছেঁড়া ছুটকেস থেকে ডান্ডি ডাইং হয়ে যায়! বিবেক কি বলে? আপনার বিবেক কি বলে? একটা ছেঁড়া ছুটকেস থেকে ডান্ডি ডাইং হয়ে যায়! বলেন! বলেন!
আরেকজন কর্নেল তাহেরকে বন্দী করা হয়। কে করছিলো? কে করছিলো কর্ণেল তাহেরকে বন্দী? বলেন! চিৎকার করে বলেন। বিবেক দিয়া বলেন। নিজের মায়ের নামে শপথ, নিজের মাটির নামে শপথ, বলেন। বলেন! এই মানুষটিকে কে খুন করছিলো? বলেন!
যদি না বলতে পারেন, আমি গান না গেয়ে এখান থেকে চলে যাবো... বলেন, আমি শুনতে পাই না।
( দর্শকদের ভেতর থেকে চিৎকার ওঠে, জিয়াআআআ, জিয়াআআআ! )
নামটা আবার বলেন!
( সমস্বরে চিৎকার, জিয়াআআআআআআআআআআ )
তাঁদেরকে শোনান, আমার পুলিশ ভাইদেরকে শোনান।
(পুলিশের উদ্দেশ্যে দর্শকদের চিৎকার, জিয়াআআআআ )
আরেকজন কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আরেকজন বসুনিয়া, অই, অইইই জায়গায়, মুখ থুবড়ে পড়ে যান। আমি কি মিছা কথা কইছি ভাইজান? আমি কি কোন মিছা কথা কইলাম? বলেন? সাক্ষী আমরা সবাই... আমি তো ঐ কথাই কইতে চাইছিলাম...
তখনই, আমার দিকে এগিয়ে আসে উদ্যত বেয়নেট, আমার দিকে এগিয়ে আসে রাইফেল। আমি নাকি বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী। সো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি বলেন? বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীকে ধরিয়ে দিন। আমি নাকি বিশৃংখলাসৃষ্টিকারী!
পৃথিবীতে শান্তি রক্ষিত হোক। আকাশে শান্তি, বাতাসে শান্তি।শান্তি রক্ষিত হোক...
তবু বন্ধুগন, আমার স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই, আমার অন্তরের কথা বলতে চাই।
[চারপাশে ঘিরে ছিলো বিএনপির পুলিশ]
______________________________________________________
আমাদের একজন সঞ্জীব চৌধুরীর বড় অভাব এই দেশে এখন। অনেক কথাই আমরা জানি, বলতে পারিনা। আমার দিকে ধেয়ে আসবে উদ্যত রাইফেল, উদ্যত বেয়নেট। গুম হয়ে যেতে পারি, এই ভয়ে বলতে পারিনা।
সঞ্জীবদা, আপনার সামনে আমি ছোট হয়ে যাই। আপনার সাহসের কাছে নিজেকে বড্ড ছোট মনে হয়। আমার অপারগতাকে ক্ষমা করবেন।
আমার, স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই...

কৃতজ্ঞতাঃ Mahmudul Haque Munshi

https://www.youtube.com/watch?v=KOa6ov28fzQ

Tuesday, November 18, 2014

মোস্তাকনামা অথবা জনপ্রিয় বাঙালী হওয়ার গোপন রহস্য

খন্দকার মোশতাক আহমেদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিলো তার চোখের পানি। যে কোনো পরিস্থিতিতে কেঁদে ফেলার অপূর্ব ক্ষমতা ছিলো তার। আর এতে অন্যরকম এক মাত্রা পেতো তার অকপট মিথ্যেগুলো। শ্রোতাকে স্পর্শ করতো, তারা আবেগাক্রান্ত হতো। এবং এক পর্যায়ে মোশতাক ভাই বলে জড়িয়ে ধরতো তাকে। আমরা আপনার সঙ্গে আছি মোশতাক ভাই- এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বেরুতো তারা। পরস্পরকে বলতো, মোশতাক ভাই মানুষটা ভালো, বড্ড আবেগী। ইমোশনাল মানুষ। বলতে বলতে তারা ছুরি মেরে যেতো সহযোদ্ধাদের পিঠে। আপাদমস্তক সাইকো মোশতাকের আরেকটি গুণ ছিলো সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। আওয়ামী লীগের ছোটবড় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে মিশতো। এবং সবার কানেই ঢালতো বিষ। চোখে হানি মুখে বিষ, মোশতাকের গোপন সাধ ছিলো বঙ্গবন্ধুর জায়গা নেওয়া। ইতিহাস বলে সে অনেকখানি সফল হয়েছিলো। আগামসি লেনের নির্জন বাড়িটায় ধুকতে ধুকতে মরার আগ পর্যন্ত তার মনে একটাই প্রশান্তি ছিলো, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলো সে।
হ্যা খন্দকার মোশতাক আহমেদও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছিলো। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহনে স্টেজে ছিলো। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলো। এবং এই মোশতাক প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ এবং পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস তৈরিতে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছিলো। এতটাই যে এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সিংহভাগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকলেও তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্ব মানতে নারাজ হযে পড়েছিলো। তারা মুক্তিযুদ্ধ চায়, তাজউদ্দিনকে চায় না। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছিলো। আর সেই স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগে একঘরে একা হয়ে পড়েছিলেন তাজউদ্দিন। হযরত ওমর (রাঃ)যেমন খালেদ বিন ওয়ালিদকে ডেকে বলেছিলেন,খালেদ তোমাকে আর সিপাহসালার হিসেবে রাখা যাচ্ছে না, লোকে যেভাবে তোমার নাম নিচ্ছে, তোমার বীরত্বের জয়গান গাইছে তাতে তারা আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছে…। পিঠে অসংখ্য ছুরি নিয়ে রক্তাক্ত তাজউদ্দিন কোনঠাসা হয়ে পড়ে ছিলেন। সফল হয়েছিলো মোশতাক আহমেদ।
খন্দকার মোশতাক আহমেদও বঙ্গবন্ধুপ্রেমী ছিলো। তার মুখে মুজিব ভাই মুজিব ভাই ফেনাতোলা জপে অভ্যস্ত ছিলো আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীরা। ১৪ আগস্ট রাতেও ভাবি আজকে কি রানছেন বলে ৩২ নম্বরের রান্নাঘরে বেগম মুজিবের বেড়ে দেওয়া ভাত তরকারি নোলা ডুবিয়ে খেতে দেখা গেছে। পরদিন একই সময়ে মোশতাক বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট। তার জুতোর নিচে বঙ্গবন্ধুর রক্ত। সে রক্ত মাড়িয়ে সে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা দেয়। নিজের আচকান এবং টুপিকে ঘোষণা করে জাতীয় পোষাক হিসেবে। এবং কুলাঙ্গার বাঙালি চেয়ে চেয়ে দেখে যায়, শুনে যায়। আর নিজেকে প্রবোধ দেয় যে ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতায় মোশতাক আহমেদ। এবং কবরে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধের সরকার, মুক্তিযুদ্ধ।
চোখে পানি, মুখে বিষ, আবেগী, ভালো মানুষ। খন্দকার মোশতাকরা বরাবরই জনপ্রিয় এই জাতির কাছে…

কৃতজ্ঞতাঃ অমি রহমান পিয়াল

Monday, November 17, 2014

জ্যাম স্যাটায়ার

কয়েকশ বছর পর মা ছেলেকে গল্প শোনাবে- 'অনেক অনেক দিন আগে, যখন সবার নিজস্ব মিগ-২৯ ছিলো না, হেলিকপ্টারের বদলে রাস্তায় বাস চলতো, তখন এক ছেলে বনানী ফ্লাইওভারের গোড়া থেকে মতিঝিল রওনা দিলো।' ছেলেটির মুখ হা হয়ে যাবে তা শুনে! ভয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।
বাবা ছেলেকে কুমিল্লাগামী একটি বাসে উঠিয়ে দিয়ে সে নিজে মতিঝিল থেকে বনানী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিআরটিসির বাসে উঠলো। ছেলে কুমিল্লা গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ভাত খেয়ে ফোন দিলো, বাবা, আমি আইসা পড়ছি। তুমি কই? বাবা উত্তর দিলো, ইয়ে, র‍্যাংস ভবনের সামনে! জ্যামে!
আর কয়েকদিন পর সবাই বাসে টিফিন ক্যারিয়ারে ভাত নিয়ে উঠবে। নীচেরটায় ভাত, মাঝখানের টায় তরকারি, উপরের টায় পাতলা ডাল। ক্যারিয়া বেয়ে বেয়ে ডাল পড়ছে, উপরে লবন খবরের কাগজে মোড়ানো, একটা কাচা মরিচ। শাহবাগ এসে ভাত খাবে সবাই।
প্লেয়িংকার্ড নিয়ে উঠবে। জমজমাট কলব্রিজ টুয়েন্টিনাইন খেলা হবে। সামনে টিভি ফিট করে মুভি ছেড়ে দেয়া যায়। বিআরটিসির মহিলা বাসগুলোতে স্টার জলসা, প্লাস এবং জীবন মানেই জী বাংলা দেখানো হবে (নো অফেন্স!)। গ্রীন লাইনের সাথে কনট্যাক করে স্লিপিং বার্থ এর কয়েকটা ফিট করানো যেতে পারে।
অংক আসবে সৃজনশীল - বিআরটিসির বাসটি বনানীর উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা ছয়টায় মতিঝিল থেকে রওনা দিলো। জ্যাম এড়ানোর জন্য সে ইস্কাটনের পাশের রোড দিয়ে ঢুকে বাংলামোটর দিয়ে বনানী পৌছুলো পৌনে নয়টায়। অপর দিকে 'ক' হেঁটে রওনা দিয়ে বনানী পৌছালো আটটায়। শক্তির ব্যয় হিসেব করো।
উত্তর- আমরা জানি, 'ক' হয় স্পাইডারম্যান , নাইলে সুপারম্যান। স্যালুট। আমরা আরও জানি, বিআরটিসির ড্রাইভারটি বুকাচুদা। মেইনরোড ছেড়ে প্যাচাগোচ দিয়ে এরাই ঢুকে।
জ্যাম যখন আরও ভয়াবহ হবে।
মাগরিবের আজানের সময় বাসে উঠা বাসার উদ্দেশ্যে-
হেলপার: স্যার উঠেন, বনানী আসছি।
যাত্রী: ওহ! এশার আজান দিতেছে মনে হয়... সময় মতই আসছি। রাস্তা ফাকা ছিলো?
হেলপার: না স্যার, ফযরের... রাস্তায় জ্যাম ছিলো
যাত্রী: ওহ, তাইলে আর আজ নামবো না, ঐ সাইড থেকে বাসে অফিসের দিকে যাই।
হেলপার: হ
যাত্রী: জোহরের আগে অফিসে যাইতে পারলে হয়
হেলপার: ফি আমানিল্লাহ
যাত্রী: ফি আমানিল্লাহ
যোগ্যতা বিচার হবে এটা দিয়ে-
মেয়ের বাবা: অফিস মতিঝিলে এখন?
ছেলে: হ্যা
মেয়ের বাবা: চাকরি করে আর কত....
ছেলে: চলে যায় আব্বা...
মেয়ের বাবা: হোয়াই আর ইউ কলিং মি আব্বা ?!!
ছেলে: সরি
মেয়ের বাবা: আগে মেয়েকে বিয়ে তো দেই! একটু ধৈর্য ধরো! পরে আব্বা ডাইকো!!!
ছেলে: সরি
মেয়ের বাবা: বাসা কোথায় তোমার ?
ছেলে: বনানী মেস করে থাকি...
মেয়ের বাবা: বনানী থেকে মতিঝিল আসো?
ছেলে: জ্বী
মেয়ের বাবা: বাসে?!
ছেলে: জ্বী বিআরটিসির টায় ওঠার চেষ্টা করি!
মেয়ের বাবা: কল মি আব্বা!
ছেলে: না মানে ইয়ে...
মেয়ের বাবা: যে বনানী থেকে মতিঝিল প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারে, সে জীবনে সব করতে পারবে।
ছেলে: থ্যাংক ইউ!
মেয়ের বাবা: সে আব্বা!
ছেলে: আব্বা!
বাসা থেকে ফোন আসবে-
মা: বাবা কুদ্দুস?
কুদ্দুস: জ্বী?
মা: তোর ছেলে হয়েছে!
কুদ্দুস: আলহামদুলিল্লাহ! আমি এখনই আসছি।
অফিস থেকে রওনা দেয়ার পর- রুট মতিঝিল- বনানী
কুদ্দুস: কই, আমার ছেলে কোথায়?
মা: তোর ছেলে স্কুলে গেছে, একটু পরেই চলে আসবে।
কুদ্দুস: অফিসে কাজ ফেলে এসেছি....
মা: এখন যাইছ না, ছেলে কে দেখে যা। নাইলে পরের বার নাতনী সহ ছেলের মুখ দেখতে হবে।

Wednesday, November 12, 2014

ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাক্ট

১। তামাম দুনিয়ার ব্যাবাক সাবজেক্ট সোজা খালি ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট বাদ দিয়া।

২। একমাত্র ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষেই সম্ভব সকাল ৮:২৫তে উইঠ্যা সকাল ৮:৩০ টার ক্লাশ করা।

৩। জিন্সের প্যান্ট আর টি শার্ট হইতাছে ইঞ্জিনিয়ারদের জাতীয় পোশাক।

৪। সাধারন মানুষ ভাঙ্গা জিনিস জোড়া দেয়, আর ইঞ্জিনিয়াররা আগে জিনিসটা ভালোভাবে ভাঙ্গে তারপর জোড়া লাগায়।

৫। ইঞ্জিনিয়াররা তৈরি করতে পারে না এমন কিছুই নাই, তারা খালি একটা মাইয়্যার সাথে রিলেশন করতে পারে না এই যা।

৬। দুনিয়ার কোন কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের মাথা ব্যাথা নাই। খালি সিগারেটের দাম ৫ টাকা থেকে ৬ টাকা হলেই আমাদের মাথায় আগুন ধরে যায়।

৭। আমরা সমাধান করতে ভালোবাসি, যেখানে কোন সমস্যা নাই ওখানেও আমরা সমস্যা তৈরি করে তারপর সমাধান করি।

৮। যে কোন ইকুয়েশন ডেরাইভ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব। খালি আমাদের কি প্রমান করতে হবে সেই ইকুয়েশন একবার লেইখ্যা দেন।

৯। তুমি কি কপার(CU) আর টেলুরিয়াম (TE) দিয়া তৈরি। কারন তুমি কিউট (CUTE)। এভাবেই ইঞ্জিনিয়াররা ফ্লার্ট করে।

১০। আমাদের জীবনের ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন হল টিচার ক্লাশ নিতাছেন কিন্তু এটেন্ডেন্স দিতাছেন না !

১১। আমদের পরীক্ষার আগে একটা রাত টাইম দাও আমরা তোমাকে সিলেবাস শেষ করে দেব।

১২। একজন ইঞ্জিনিয়ারই জানে যে আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার কি বা*ডা জানে। কিন্তু সাধারন মানুষ আমাদের জ্ঞানের ঢেকি ভাবে।

১৩। আমরা রাতের বেলা ঘুমাই না আর ভোরবেলা উঠিনা। আমরা ভোরে ঘুমাই আর সন্ধ্যার দিকে উঠি।

১৪| আমরা আমাদের বাপ মায়ের কাছে ধোয়া তুলসি পাতা। ভাজা মাছটাও উল্টায়া খাইতে পারি না। এক পিঠ খায়া রাইখা দিই। ভাবটা এমন, "ও মা !!! ওটা উল্টালেও খাওয়া যায় ???"

১৫| আমাদের সাথে ঝগড়া করা আর গালে বসা মশা মারা একই কথা। কারন মশা মরুক আর না মরুক নিজের গালে থাপ্পর মারতে হবেই।

১৬| প্রত্যেক নতুন Semester আসলে সবার মুখে একটাই হতাশা, এই বছর ও কোন সুন্দর মাইয়্যা ভর্তি হলো না রে পাগলা।

১৭| একটা মাতাল ইঞ্জিনিয়ার যত ভালো ইংলিশ বলতে পারে, আমেরিকানরাও অত ভালো ইংলিশ বলতে পারে কিনা সন্দেহ।

১৮| প্রত্যেক Semester এর শেষে " এই Semesterটা টেনে টুনে পাস করে যাই নেক্সট Semester এ দেখাই দিব আমি কি জিনিস..!" কিন্তু আর দেখানো হয় না কিছুই।

এলোমেলো ভাবনা

জীবনানন্দ দাশ বলে গিয়েছিলো, আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না; আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে, পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে। জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে নক্ষত্রের নিচে।
আমি বলেছিলাম, তোমাকে অনন্য হতে হবে না এই সমাজের জন্য। যারা সার্টিফিকেট দিয়ে সব যাচাই করে। অদ্ভুত এই দৌড়ে তোমাকে সফল হতে হবে না বোধহয় এই সমাজের জন্য। শুধু জীবন বুঝলেই চলবে। জীবনের প্রতিটা স্তর খুটে খুটে দেখবে। লিফটে তরতর করে উঠে যাওয়াদের দেখে হয়তো হতাশ হবে। কিন্তু পাশের সিঁড়িতে আমি তোমার ওঠার আওয়াজ পাই। প্রতিটা সিঁড়ি ভেঙে তুমি উপরে উঠছো। বন্ধুরা লিফটে আরামে উঠে গেছে, তোমার একটু কষ্ট হচ্ছে এই যা। গন্তব্য ওখানেই, যেখানে তোমার বন্ধুরা আগেই পৌছে গেছে। শুধু সিঁড়ি ভাঙতে হবে, হাল ছাড়া যাবে না। সিঁড়ি ভেঙে যাও। তোমার পায়ের শব্দ যেন না থামে।
ঠিক ওখানটা তেই সে যাবে যেখানটায় তুমি সিএনজি নিয়ে আগে পৌছুবে। প্রথম হবার হাত তালি টা তুমি পাবে জানি। সিএনজির গুমোট পরিবেশে তুমি রিকশায় উঠে বাতাস গায়ে লাগাবার মজা বুঝবে না। তাই প্রথম হবার হাত তালি না পেলেও, রিকশা থেকে নেমে উৎফুল্ল মনে সে তোমার পাশেই দাড়াবো। সে যে প্রথম হবার দৌড়ে অংশ নেয় না, হেঁটে যাবে সে ওখানেই, ঠিক তোমাদের পাশে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হবার পদক গুলো তোমাদের শো-কেসেই রেখে দিও, তার কাছে থাকুক বিচিত্র এই পৃথিবী তে বিচিত্র ভাবে বেচে থাকার অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতারা, যা তোমাদের পদক গুলো কে অবাক করবে। বেচে থাকতে চায় তারা ভালো লাগা নিয়ে। এটাই বোধহয় জীবন। আর যদি পাশে না দেখতে পাও তাকে , তবে বুঝে নিও পৃথিবী তে নতুন কোন গন্তব্যের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে প্রথম হওয়াদের আগে কেউ পৌছে গেছে।

Tuesday, November 11, 2014

শিবনারায়ন দাশ - ইনি কে?


লোকে বলে তিনি স্বভাব আঁকিয়ে ছিলেন। উত্তাল সেই সময়ের ছাত্রনেতাও ছিলেন। ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণও করেন। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
১৯৭০ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ৪০১ নং (উত্তর) কক্ষে তিনি একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্নে পতাকার ডিজাইন করেন। এক রাতের ভেতর। সেই রাতেই নিউমার্কেট এলাকার বলাকা বিল্ডিংয়ের ৩ তলার ছাত্রলীগ অফিসের পাশে নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্সের টেইলার্স মাস্টার খালেক মোহাম্মদী পতাকার নকশা বুঝে কাজ শুরু করেন। একটি লাল সবুজের পতকার জন্ম হয়। তার নাম শিব নারায়ন দাশ, কতজন শুনেছি তার নাম? এটি বিশাল প্রশ্ন।
সেই পতকাটি পটূয়া কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জন হয়েছে, কিন্তু এতে শিবনারায়ন দাসের নামটি কিভাবে যেন হারিয়ে গেলো। নীচের লেখাটি আরেকটি উত্তাল সময়ের। শিব নারায়ন দাস এসেছিলেন সেই উত্তাল শাহবাগে।
নিজের মতো করে লিখে ফেললাম প্রলয় দা। হা, প্রলয় হাসানের সাথে দেখা হয়েছিলো শিব নারায়ন দাশের। বিজ্ঞ প্রলয় চকিতে চিনে ফেললেও পাশ থেকে কেউ প্রলয় হাসান কে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন - 'ইনি কে?' প্রলয় হাসান উত্তর দিলেন- 'ইনি হচ্ছেন শিব নারায়ন দাশ। বাংলাদেশের প্রথম পতাকার ডিজাইনার।' শিব নারায়ন দাশ সেটা শুনে ফেলে ক্ষোভ মিশ্রিত কন্ঠে বল্লেন - 'না না, আমি কেউ না।' প্রলয় হাসান বললেন - 'শিবুদা আমরা জানি আপনার অনেক অভিমান..." তিনি প্রলয় কে থামিয়ে দিয়ে বল্লেন - 'না না, আমার কোন অভিমান নেই। কার উপর অভিমান? কিসের অভিমান?'
গতকাল জাতীয় স্মৃতিসৌধ স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন মারা গেলেন। ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট এরশাদ যখন জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন, সে অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় ভিআইপিরা চলে যাওয়ার পর তিনি সেখানে গিয়ে জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন। স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পর কারা যেন বেনামি চিঠি দিয়ে তাকে খুন করতে চেয়েছিল। তারপর পত্রিকায় ইচ্ছা করে তার নাম ভুল লেখা হয়েছিল। নকশার সম্মানী বাবদ ২ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তার আয়কর ধরা হয়েছিল ৫০ শতাংশ, মানে ১ লাখ।
মাইনুল হোসেন মারা গেলেন মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে। শিব নারায়ন দাশ অভিমান নিয়ে নিভৃতে আছেন। হুমায়ন আজাদ সঠিক কথাটি বলেছেন , "বাঙালী জীবিত প্রতিভাকে লাশে পরিণত করে, আর মৃত প্রতিভার কবরে আগরবাতি জ্বালে"

File:Flag of Bangladesh (1971).svg
মৃত্যুর পর হয়তো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়া হবে, প্রতিটি মৃত্যুবার্ষীকিতে বিবৃতি, মৃত্যুতে গভীর শোক। আর বেঁচে থাকবে অভাব জরা ব্যধি আর একরাশ অভিমান নিয়ে। অদ্ভুত এক জাতি আমরা। স্মৃতিসৌধ কিংবা জাতীয় পতাকা যারা দিয়ে গেলো, তাদেরকে চিনিই না। অদ্ভুত!

Monday, November 10, 2014

জানলা

জানলা, তুমি বিজ্ঞাপনের মতো,
সুচতুর এক অমোচনের ফাদ। 
জানলা তুমি এঘরে শ্বাশত 
ও ঘরে কার স্বর্নে লুকাও খাদ?

জানলা তুমি বোশেখ মাসের রোদে 
কার বিছানায় হঠাত আগুন জালাও 
জানলা তুমি কিসের প্রতিশোধে 
হাত রেখেও, দরজা দিয়ে পালাও?

জানলা তুমি বিস্মরনের নদী
তোমার দুকুল আকুল করা ডাকে
একটা জীবন গ্রীলেই নিরবধি
অপেক্ষা তার চিবুক তুলে রাখে

জানলা তোমার বুক পকেটে আধার
চিনে নেয়া একটা চিঠি, আশায়
ভুল করে ঠিক সেই চিঠিটাই আবার
ধোপার ঘরে, জলেই দেহ ভাসায়

জানলা তোমার লোহার গারদ চিনে
আটকে দিলাম কাঠের কপাট দুটো
আমিও নিলাম একাকীত্ব কিনে,
ভেসে যাবার জন্যেও খড় কুটো।