খুব ছোটবেলায় দেখতাম ৭ই নভেম্বর দিনটা আসলেই বেশ আড়ম্বরের সাথে মহা উৎসাহে ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার বিপ্লব দিবস হিসেবে দিনটা পালন হচ্ছে। ঠিক বুঝতে পারতাম না সিপাহী জনতা কিসের বিপ্লব করছিল, এর উদ্দেশ্য কি ছিল। জানতে চাইলে উদযাপনকারী বেশিরভাগ মানুষই উত্তর দিতে পারত না। আজ এতো বছর পরেও তারা উত্তর দিতে পারে না। কেবল তোতা পাখির মত মুখস্ত আউড়ে যায়, ৭ই নভেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সিপাহি-জনতা এক ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে জেল থেকে বের করে আনে। জিয়া বহুদলীয় গনতন্ত্র প্রবর্তন করেন, দেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন...
৭ই নভেম্বর, ১৯৭৫। ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট, শেরে বাঙলা নগর। অফিসারস মেসের ক্যান্টিনে পরোটা আর গরুর মাংস দিয়ে নাস্তা করছিলেন জেনারেল খালেদ মোশাররফ, লেফট্যানেন্ট কর্নেল এটিএম হায়দার ও কর্নেল নাজমুল হুদা। শ্রেণীহীন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিচিত্র লক্ষ্যে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে রাত বারোটায় বিদ্রোহ করে পাকি এজেন্ট জিয়াকে বের করে আনে জাসদের গণবাহিনী, বিপ্লবীসেনারা ক্যান্টনমেন্টের প্রতিটি সৈনিকের মগজ ওয়াশ করে দেয় এক বিচিত্র স্লোগানে—সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই। খালেদ এই ভয়ংকর সংবাদ পেয়েছেন, কিন্তু শান্ত নিঃশঙ্কচিত্ত দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। হঠাৎ মেজর জলিল ও মেজর আসাদ একজন বিপ্লবী হাবিলদার ও কয়েকজন সৈনিককে নিয়ে প্রবেশ করল ক্যান্টিনে। চিৎকার করে বলল,
--আমরা তোমার বিচার চাই।
পাথুরে শক্ত চোয়ালবদ্ধ খালেদের গলাটা আশ্চর্য শান্ত শোনাল, ঠিক আছে। তোমরা আমার বিচার করো। তোমাদের কমান্ডিং অফিসারের কাছে নিয়ে চলো আমাকে।
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে উঠলো,
--আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো।
উদ্যত বন্দুকের সামনে ঠাণ্ডা চোখে ঋজু ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে হঠাৎ পাহাড়ের মত অবিচল মনে হল,
--ঠিক আছে, তোমরা এখানেই বিচার করো।
পাথুরে শক্ত চোয়ালবদ্ধ খালেদের গলাটা আশ্চর্য শান্ত শোনাল, ঠিক আছে। তোমরা আমার বিচার করো। তোমাদের কমান্ডিং অফিসারের কাছে নিয়ে চলো আমাকে।
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে উঠলো,
--আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো।
উদ্যত বন্দুকের সামনে ঠাণ্ডা চোখে ঋজু ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে হঠাৎ পাহাড়ের মত অবিচল মনে হল,
--ঠিক আছে, তোমরা এখানেই বিচার করো।
ট্যারররর... এক ঝলক আগুনের পশলায় ব্রাশফায়ার হল। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন খালেদ মোশাররফ। সেই খালেদ মোশাররফ, যিনি একাত্তরের রনাঙ্গনে নেতা হিসেবে এক অসামান্য বীর ছিলেন, সেক্টর কমান্ডার হয়েও যুদ্ধক্ষেত্রের পেছনে বসে যুদ্ধ পরিচালনার বদলে অস্ত্র হাতে বাঘের গর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন শত্রুর উপর। সেই খালেদ মোশাররফ, যার অসমসাহসী পরিকল্পনা জেনারেল টিক্কা খানের দম্ভ করে দেওয়া ঘোষনা(জুন মাসের মধ্যে দুষ্কৃতিকারীদের দমন করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন চালু হবে) ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। অসংখ্যবার হামলা চালিয়ে আর শত শত সেনার মৃত্যুর পরেও আর কখনই সেই রেললাইন চালু করতে পারেনি পাকিরা। সেই খালেদ মোশাররফ , ৭১রে ২৩শে অক্টোবর যুদ্ধক্ষেত্রে মর্টার শেলের গোলা এসে লাগে যার মাথায়, অসংখ্য স্পিন্টার ঢুকে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল মাথা, কোমায় চলে যাওয়ার পরেও মেডিকেল সায়েন্সের মিরাকল ছিল তার বেঁচে ওঠা,ব্রেন অপারেশনের পরেও অনেকগুলা স্পিন্টার বের করা যায় নাই মাথা থেকে। সেই খালেদ মোশাররফ, যার ললাটে ছিল এ মাটির বীর সন্তানের জয়টিকা, মাথায় বীর উত্তমের শিরোনাস্ত্র আর মাথার বামপাশে আজীবন পাকি গোলন্দাজ বাহিনীর কামানের গোলা। সেই খালেদ মোশাররফ লুটিয়ে পড়লেন। স্বাধীনতার আদর্শ আর চেতনার অনির্বাণ শিখা জ্বালিয়ে রাখার অপরাধে তার বিচার সম্পন্ন হল...
দুই নম্বর সেক্টরের ক্র্যাক প্লাটুনের কারিগর, গেরিলাযুদ্ধের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে দেওয়া অবিস্মরণীয় বীর এটিএম হায়দারকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে এল উন্মত্ত বিপ্লবীরা। পৈশাচিক কায়দায় বেয়নেট চার্জ করতে করতে হঠাৎ এক পশলা ব্রাশফায়ার করল কেউ। একাত্তরের ভারতীয় জেনারেল অরোরা আর পাকি জেনারেল নিয়াজির সাথে যে অকুতোভয় বঙ্গশার্দূল দৃঢ় পায়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন আত্মসমর্পণস্থলে, তাকে বিনা কারনে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সভ্যতার নিকৃষ্টতম গণহত্যা চালিয়েও আমাদের দমাতে পারেনি, ওদের হাঁটুমুড়ে, নাকেখত দিতে বাধ্য করেছিলাম আমরা, ছিনিয়ে এনেছিলাম বিজয়ের লাল সূর্যটা। ক্ষমা চাওয়ার বদলে এই দেশকে আবার পাকিস্তান বানাবার অব্যাহত চক্রান্তের শুরু সেই তখন থেকেই। পাকিস্তানের সেই চক্রান্ত অনেকাংশে সফল হয়ে যায়, যখন পাকি স্লিপিং এজেন্ট জিয়ার পরোক্ষ সাহায্য ও সহযোগিতায় শেখ মুজিব , তার পরিবার ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে ফারুক-ডালিম গং। খালেদ জিয়াকে চিনতে পেরেছিলেন,তাই ৩রা নভেম্বর বিশ্বাসঘাতক জিয়াকে বন্দী করেছিলেন, বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সব চক্রান্তের বিরুদ্ধে। ঠিক এই সংকটকালে কর্নেল তাহের সমাজতন্ত্রের অলীক স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিচিত্র এক বিপ্লব ঘটালেন, জিয়া মুক্ত হয়েই শাসনক্ষমতা অখল করল,খালেদ-হায়দার-হুদাদের ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হল। একজন পাকিস্তানীকে বিশ্বাস করার মাশুল তাহের দিলেন ফাঁসিতে ঝুলে। অন্ধকার সময়ে হারিয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা... বাংলাদেশ...
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সভ্যতার নিকৃষ্টতম গণহত্যা চালিয়েও আমাদের দমাতে পারেনি, ওদের হাঁটুমুড়ে, নাকেখত দিতে বাধ্য করেছিলাম আমরা, ছিনিয়ে এনেছিলাম বিজয়ের লাল সূর্যটা। ক্ষমা চাওয়ার বদলে এই দেশকে আবার পাকিস্তান বানাবার অব্যাহত চক্রান্তের শুরু সেই তখন থেকেই। পাকিস্তানের সেই চক্রান্ত অনেকাংশে সফল হয়ে যায়, যখন পাকি স্লিপিং এজেন্ট জিয়ার পরোক্ষ সাহায্য ও সহযোগিতায় শেখ মুজিব , তার পরিবার ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে ফারুক-ডালিম গং। খালেদ জিয়াকে চিনতে পেরেছিলেন,তাই ৩রা নভেম্বর বিশ্বাসঘাতক জিয়াকে বন্দী করেছিলেন, বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সব চক্রান্তের বিরুদ্ধে। ঠিক এই সংকটকালে কর্নেল তাহের সমাজতন্ত্রের অলীক স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিচিত্র এক বিপ্লব ঘটালেন, জিয়া মুক্ত হয়েই শাসনক্ষমতা অখল করল,খালেদ-হায়দার-হুদাদের ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হল। একজন পাকিস্তানীকে বিশ্বাস করার মাশুল তাহের দিলেন ফাঁসিতে ঝুলে। অন্ধকার সময়ে হারিয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা... বাংলাদেশ...
চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি। কাল সকালেই আসব...
স্ত্রী সালমা খালেদকে দেওয়া কথা রাখতে পারেননি খালেদ। ফিরতে পারেননি আর তিনি, ফিরতে পারেননি এটিএম হায়দার , কর্নেল হুদার মত বাঙলা মায়ের হাজারো বীর সন্তান। যে বাংলাদেশের জন্য তারা সংগ্রাম করেছিলেন, সে বাংলাদেশকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছিল জিয়া, স্বাধীন বাংলাদেশের ধমনীতে সযত্নে ঢুকিয়ে দিয়েছিল দূষিত পাকিস্তানী রক্ত। তাই আজো লাল-সবুজের পতাকার খামচে ধরে চাঁদতারা রঙের শকুন, লাল টকটকে সূর্যের এক রোদঝলমলে সকালে রাজপথের মিছিলে বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করে কিছু শুয়োর...
Courtesy: ডন মাইকেল করলেওনে
Courtesy: ডন মাইকেল করলেওনে
No comments:
Post a Comment