Monday, June 29, 2015

সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনঃস্তাত্বিক আলোচনা (২য় পর্ব) --অভিজিৎ রায়

‘সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ?’ প্রবন্ধটির প্রথম পর্ব প্রকাশের পর অনেক পাঠক কৌতুহলী হয়েছেন, শুধু সমকামিতা বিষয়ে নয়, আরো কিছু সংশ্লিষ্ট স্পর্শশকাতর বিষয়েও।  এর মধ্যে একজন পাঠক এই রূপান্তরকামিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন বিশদভাবেভাবছি এ পর্বটিতে রূপান্তরকামিতা নিয়ে কিছু কথা বলব।  পরের পর্বে আমরা বার ফিরে যাব সমকামিতার আলোচনায়। একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। আই আইটির এক ভদ্রলোকের কথা জানতাম। খুব মেধাবী এক ছাত্র। কিন্তু পুরুষ হয়ে জন্মালে কি হবে, তিনি নিজেকে সবসময় নারী মনে করতেন।  নারীদের সাথে থাকতে বা বন্ধুত্ব করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হরতেন তিনি। ভদ্রলোকের নাম নৃসিংহ মন্ডল। দৈনিক আজকাল ১৯৯৯ সালের ১২ই আগাস্ট তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল এই শিরোনামে- “ছয় বছর ধরে মেয়ে হতে চাইছে আই আইটির কৃতি ছাত্র”।  সনাতন চিকিসা পদ্ধতিতে মনে করা হয়, এধরনের লোকেরা নিশ্চয় মনোরোগি। ভারতের নামকরা ডাক্তারেরা তাকে পরীক্ষা করলেন, তার শরীরে হরমোনগত কোন তারতম্য চোখে পড়ল না, মানসিক বিকারের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না।  ডাক্তারেরা কি করবেন ভেবে পেলেন না।  শুধু চিকিসা ক্ষেত্রে নয়, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তৈরি হল একধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির এবং জটিলতার।  নৃসিংহ মন্ডলও ছেড়ে দেবার পাত্র নন। তিনি মানবাধিকার কমিশনের মধ্যমে নিজের “নারী হবার অধিকার” অধিকার প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন।  মেডিকেল বোর্ডের সামনে দ্বিধাহীন ভঙ্গিতে বললেন – “ছেলেবেলা থেকেই আমার মনে হত আমি ছেলে নই, মেয়ে। বাবা রেগে যেত। মা কিছু বলতেন না।

 ছেলেবেলা থেকেই মেয়েদের পোষাক পরতে পছন্দ করতাম। চিরকালই আমার ছেলেবন্ধুর চেয়ে মেয়ে বন্ধু বেশি। তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি”। চিকিসকেরা তাকে বোঝালেন, “একবার ছেলে থেকে মেয়ে হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কোন পরিস্থিতিতে চাইলেও আবার ছেলে হওয়া যাবে না”।  নৃসিংহের পালটা প্রশ্ন মেডিকেল বোর্ডকে – “সে পরিস্থিতি আসবে কেন? আমার যথেষ্ট বুদ্ধি-বিবেচনা আছে। আমি ভেবেচিন্তেই মেয়ে হতে চাই”। তার প্রতি প্রশ্ন ছিল – “সামাজিক অসুবিধা হতে পারে, চাকরী-বাকরীর অসুবিধা হতে পারে”। তার জবাব ছিল – “এখন স্কলারশিপ পাই। গবেষনার পরে দেশে বিদেশে চাকরী পাবই। আর সামাজিক কোন অসুবিধা আমার হবে না। আর হলেও আমার কিছু যায় আসে না” ।  আরেকটা উদাহরণ দেই। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার পুরুষ রূপান্তরকামী জরগেন্সেনের লেখা “Christine Jorgensen: A Personal Autobiography” বইটির কথা বলা যায়।  ক্রিস্টিন জরগেন্সেনের আগের নাম ছিল জর্জ জরগেন্সেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন।  তিনি নিজেকে নারী ভাবতেন। তার রূপান্তরকামী মানসিকতার জন্য চাকরী চলে যায়।  পরে ১৯৫২ সালে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে তিনি নারীতে রূপান্তরিত হন।  এ ধরনের অজস্র ঘটনার উদাহরণ হাজির করা যায়।  এগুলোর পেছনে সামাজিক ও মনস্তাত্বিক কারণকে অস্বীকার না করেও বলা যায় – এ ধরনের চাহিদা বা অভিপ্রায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ নয়। আর সে জন্যই, প্রখ্যাত রূপান্তরকামী বিশেষজ্ঞ হেনরী বেঞ্জামিন বলেন, আপাত পুরুষের মধ্যে নারীর সুপ্ত সত্তা বিরাজমান থাকতে পারে। আবার আপাত নারীর মধ্যে পুরুষের অনেক বৈশিষ্ট্য সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তিনি বলেন – “Every Adam contains the element of Eve and every Eve harbors traces of Adam, physically as well as psychologically.”  হেনরী বেঞ্জামিন  ছাড়াও  এ নিয়ে গবেষণা করেছেন রবার্ট স্টোলার, এথেল পারসন, লিওনেল ওভেসে প্রমুখ।  এদের গবেষণায় উঠে এসেছে দুই ধরনের রূপান্তররকামীতার কথা। শৈশবের প্রথমাবস্থা থেকে যাদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হবার সুতীব্র বাসনা থাকে তাদের মুখ্য রূপান্তরকামী বলা হয়। অন্যদিকে যারা দীর্ঘদিন সমকামিতায় অভ্যস্ত হয়েও নানারকম সমস্যায় পড়ে মাঝে মধ্যে নারীসুলভ ভাব অনুকরণ করার চেষ্টা করে তাদের বলে গৌন রূপান্তরকামী। ১৯৬০ সালে মনোচিকিসক ওয়ালিন্দার রূপান্তরকামীদের উপরে একটি সমীক্ষা চালান। তার এই সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতি ৩৭,০০০ এ একজন পুরুষ রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে অন্যদিকে প্রতি ১০৩,০০০-এ একজন স্ত্রী রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে। ইংল্যান্ডে এ সমীক্ষাটি চালিয়ে দেখা গেছে যে সেখানে প্রতি ৩৪,০০০ এ একজন পুরুষ রূপান্তরকামী ভূমিষ্ট হচ্ছে আর অন্যদিকে প্রতি ১০৮,০০০ এ একজন জন্ম নিচ্ছে একজন স্ত্রী রূপান্তরকামী। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে সেখানে ২৪,০০০ পুরুষের মধ্যে একজন এবং ১৫০,০০০ নারীর মধ্যে একজন রূপান্তরকামীর জন্ম হয়  ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে  দেখা যায়, জোয়ান অব আর্ক থেকে শুরু করে আজকের প্রথিতযশা জীববিজ্ঞানী জোয়ান (জনাথন) রাফগার্ডেন কিংবা বাস্কেটবল লিজেন্ড ডেনিস রডম্যান সহ অনেকের মধ্যেই যুগে যুগে রূপান্তর প্রবণতা বিদ্যমান ছিল এবং এখনো আছে২৯।  উইকিপেডিয়ার পেইজেও খ্যাতিমান রূপান্তরকামীদের একটি আংশিক তালিকা পাওয়া যাবে৩০

এখন কথা হচ্ছে মানবসমাজে রূপান্তরকামীতার আস্তিত্ব আছে কেন?  এ বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের ‘সেক্স’ এবং ‘জেন্ডার’ শব্দদুটির  অর্থ এবং ব্যাঞ্জনা আলাদা করে বুঝতে হবে।  সেক্স এবং জেন্ডার কিন্তু সমার্থক নয়। বাংলা ভাষায় শব্দদুটির আলাদা কোন অর্থ নেই, এদের সঠিক প্রতিশব্দও আমাদের ভাষায় অনুপস্থিত। সেক্স একটি শরীরবৃত্তিয় ধারণা।  আর জেন্ডার মুলতঃ সমাজ-মনস্তাত্বিক অবস্থা।  এই প্রসঙ্গে ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব সাইকোলজিতে’ বলা হয়েছে – 
Sex refers to the physiological, hormonal and genetic makeup (XX or XY chromosome) of an individual; Gender is a cultural category that contains roles, behaviors, rights, responsibilities, privileges and personality traits assigned by that specific culture to men and women.

হেনরি বেঞ্জামিন তার ‘ট্রান্সেক্সুয়াল ফেনোমেনন’ প্রবন্ধে প্রায়ই বলেছেন –
Gender is located above, and sex is bellow the belt.

অর্থা সোজা কথায়, সেক্স সমগ্র বিষয়টিকে 'দেহ কাঠামো' নামক ছোট্ট চৌহদ্দির মধ্যে আটকে ফেলতে চায়, যেখানে জেন্ডার বিষয়টিকে নিয়ে যেতে চায় অবারিত নীলিমায়।

যৌনতার শরীরবৃত্তিয় বিভাজন মেনে নিয়েও বলা যায়, সামাজিক অবস্থার (চাপের) মধ্য দিয়েই আসলে এখানে একজন নারী ‘নারী’ হয়ে উঠে, আর পুরুষ হয়ে ওঠে ‘পুরুষ’।  আমাদের রক্ষণশীল সমাজ নারী আর পুরুষের জন্য জন্মের পর থেকেই দুই ধরনের দাওয়াই বালে দেয়।  নানা রকম বিধি-নিষেধ ও অনুশাসন আরোপ করে।  পোশাক আষাক থেকে শুরু করে কথা বলার স্টাইল পর্যন্ত সবকিছুই এখানে লৈঙ্গিক বৈষম্যে নির্ধারিত হয়।  এর বাইরে পা ফেলা মানেই যেন নিজ লিঙ্গের অমর্যাদা।  কোন ছেলে একটু নরমভাবে কথা বললেই তাকে খোঁটা দেওয়া হয় ‘মেয়েলী’ বলে, আর নারীর উপর হাজারো রকম বিধি-নিষেধ আর নিয়মের পাহাড় তো আছেই।  ফলে দুই লিঙ্গকে আশ্রয় করে  তৈরি হয় দু’টি ভিন্ন বলয়।  কিন্তু সমস্যা হয় রূপান্তরকামি মানুষদের নিয়ে। এরা আরোপিত বলয়কে অতিক্রম করতে চায়।  তারা কেবল ‘যৌনাঙ্গের গঠন অনুযায়ী’ লিংগ নির্ধারনের সনাতনী প্রচলিত ধারনাকে মন থেকে মেনে নিতে পারে না।  তারা শারীরিক লিংগকে অস্বীকার করে বিপরীত লিঙ্গের সদস্য হতে চায়।  তারা মনে করে সেক্স নয়, জেন্ডার অনুযায়ী তাদের লিংগ নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।  বস্তুতঃ বিগত কয়েক দশকে জেন্ডার সম্পর্কিত ধারণা যত ঋদ্ধ হয়েছে ততই লৈঙ্গিক বৈষম্যের প্রাচীর ভেঙে পড়ছে।  চিকিসাবিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতিতে সেক্সচেঞ্জ অস্ত্রোপ্রচারে এসেছে বিপ্লব। কানাডা, হল্যান্ড, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশে রূপান্তরকামী মানুষের চাহিদাকে মূল্য দিয়ে সেক্সচেঞ্জ ওপারেশনকে আইনসিদ্ধ করা হয়েছে।  আমাদের মত সংখ্যাগরিষ্ট ষাঁড়েদের জন্য ব্যাপারটা ‘অস্বাভাবিক’ কিংবা ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ শোনালেও খোদ প্রকৃতিতেই বহু প্রজাতির মধ্যে সেক্স চেঞ্জ বা রূপান্তরপ্রবণতা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এমনি কিছু উদাহরণ পাঠকদের জন্য হাজির করিঃ
                                                                                                 
ঊত্তর আমেরিকার সমুদ্রোপুকূলে এক ধরনের ক্ষুদ্র প্রাণি খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরা আটলাণ্টিক স্লিপার  শেল (Atlantic Slipper Shell) নামে পরিচিত। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এরা হল ক্রিপিডুলা ফরমিক্যাটা (crepidula formicata)। এই প্রজাতির পুরুষেরা একা একা ঘুরে বেড়ায়।   তারপর তারা কোন স্ত্রী সদস্যদের সংস্পর্শে আসে এবং সংগমে লিপ্ত হয়। যৌন সংসর্গের ঠিক পর পরই পুরুষদের পুরুষাংগ খসে পড়ে এবং এরা রাতারাতিও স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরের পর এরা আর একাকী ঘুরে বেড়ায় না, বরং স্থায়ী হয়ে বসবাস করতে শুরু করে। প্রকৃতিতে পুরুষ থেকে নারীতে পরিনত হবার এ এক বিচিত্র দৃষ্টান্ত।  ক্রিপিডুলা নিয়ে গবেষণায় বেড়িয়ে এসেছে আরো নানা ধরনের বিচিত্র তথ্য।  বিজ্ঞানীরা এই এই প্রজাতির একটি সদস্যকে খুব ছোট অবস্থায় অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন। এবার পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, এর মধ্যে স্ত্রী জননাঙ্গের বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে। কিন্তু যদি একে কোন পরিণত ক্রিপিডুলার সাথে রাখা হয়, তবে সে ধীরে ধীরে পুরুষে রূপান্তরিত হরে থাকে।

উত্তর আমেরিকার ওই একই অঞ্চলের ‘ক্লিনার ফিশ’ নামে পরিচিত এক ধরনের মাছের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে রূপান্তরকামীতার পরিস্কার প্রমাণ পেয়েছেন।  এ মাছগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম ল্যাবারিডেস ডিমিডিয়াটাস (Laborides dimidiatus)।  এ প্রজাতির পুরুষেরা সাধারণতঃ পাঁচ থেকে দশজন স্ত্রী নিয়ে ঘর বাঁধে (নাকি ‘হারেম বাঁধে’ বলা উচি?)। কোন কারণে পুরুষ মাছটি মারা পড়লে  স্ত্রীদের মধ্যে যে কোন একজন (সম্ভবতঃ সবচেয়ে বলশালী জন) সংসার পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এই দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই ওই স্ত্রীমাছটির মধ্যে দৈহিক পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়। দু সপ্তাহের মধ্যে সে পরিপূর্ণ পুরুষে রূপান্তরিত হয়ে যায় (তার গর্ভাশয় ডিম্বানু উপাদন বন্ধ করে দেয়, এবং নতুন করে পুরুষাংগ গজাতে শুরু করে) এবং এবং অন্যান্য স্ত্রী মাছদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। প্রাকৃতিক নিয়মে স্ত্রী থেকে পুরুষে রূপান্তরের এও একটি মজার দৃষ্টান্ত। রূপান্তরকামীতার উদাহরণ আছে এনিমোন (anemone) বা ‘ক্লাউন মাছ’দের (Clown Fish) মধ্যেও।  বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরের কাছাকাছি বেড়ে ওঠা মাছদের মধ্যে পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অনু্যায়ী যৌনতার পরিবর্তন অতি স্বাভাবিক ঘটনা
চিত্রঃ এনিমোন বা ক্লাউন মাছদের মধ্যে সেক্স চেঞ্জ অতি সাধারণ একটি ঘটনা। প্রাকৃতিক ট্রান্সেক্সুয়ালিটির বাস্তব উদাহরণ।
ইউরোপিয়ান ফ্লে অয়েস্টার (European Flay Oyster) ও অস্ট্রা এডুলিস (Ostra edulis) প্রজাতির ঝিনুকেরা যৌনক্রিয়ার সময় পর্যায়ক্রমে স্ত্রী ও পুরুষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বস্তুতঃ এদের একই শরীরে স্ত্রী ও পুরুষ জনন অংগের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।  বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, এই প্রজাতির ঝিনুকেরা পুরুষ হিসেবে যৌনজীবন শুরু করার পর ধীরে ধীরে স্ত্রীর ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়। ইংল্যান্ডের সমুদ্র উপকূলে  এই ধরনের ঝিনুক প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো প্রতিবছর একবার করে তাদের যৌনতার পরিবর্তন ঘটায়। কিন্তু ভূমধ্যসাগরীয়  উষ্ণ অঞ্চলে ওই একই ঝিনুকের দল প্রতি ঋতুতেই তদের যৌন রূপের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। নারী থেকে পুরুষ কিংবা পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরের আকছার প্রমাণ পাওয়া গেছে ইউনো মার্জিনালিস (Uno marginalis) নামের আরো একটি প্রজাতির ঝিনুকের মধ্যেও।  সামুদ্রিক পোকা বলিনিয়ার মধ্যেও এ ধরণের রূপান্তর ঘটে থাকে। যৌনতার পরিবর্তন হরহামেশাই ঘটে চলেছে কিছু মাছি, কেঁচো, মাকড়শা এবং জলজ ফ্লি ডাফনিয়াদের মধ্যেও, এমনকি এদের অনেকেই পরিবেশ ও পরিস্থিতির সু্যোগ নিয়ে  ‘যৌনপ্রজ’ থেকে ‘অযৌনপ্রজ’তেও রূপান্তরিত হয় ।

তাহলে এখন প্রশ্ন হল, এই সমস্ত উদাহরণ এখানে দেওয়ার উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হল, প্রকৃতির বৈচিত্রময় জীবজগতের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া।  সেই সাথে এটাও মনে করিয়ে দেওয়া যে ব্যাপারগুলো এত সোজাসাপ্টা নয়, যে আমরা হলফ করে বলে দিতে পারব শুধু আমরা বিষমকামীরাই প্রাকৃতিক, আর বাকীরা সব ‘বানের জলে ভাইস্যা আইছে’ । এরকম ভাবার আগে আমাদের বোঝা উচি যে, সাদা-কালো এরকম চরম সীমার মাঝে সবসময়ই কিছু ধুসর এলাকা থাকে। আর সেই ধুসর এলাকায় নির্বিঘ্নে বাস করে সমকামিতা, উভকামিতা, উভকামের সমকামিতা, রূপান্তরকামিতার মত যৌনপ্রবৃত্তিগুলো।

সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনঃস্তাত্বিক আলোচনা (প্রথম পর্ব) --অভিজিৎ রায়

অনেকেই সমকামিতা নিয়ে বেজায় বিব্রত থাকেন। নাম শুনলেই আঁতকে উঠেন। কাঠমোল্লারা তো গালি দিয়ে খালাস- সমকামিরা হচ্ছে খচ্চর স্বভাবের, কুসি রুচিপূর্ন, মানসিক বিকারগ্রস্ত। এমনকি  প্রগতিশীলদের মধ্যেও রয়েছে নানা রকম ওজর আপত্তি।  যারা শিক্ষিত, ‘আধুনিক’ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন, গে লেজবিয়ন ইত্যকার তথাকথিত ‘পশ্চিমা’ শব্দের সাথে কমবেশি পরিচিত হয়েছেন, তারাও খুব কমই ব্যাপারটিকে মন থেকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মেনে নিতে পারেন।  তাদের অনেকেই এখনো ব্যাপারটিকে ‘প্রকৃতি বিরুদ্ধ’ মনে করেন, আর নয়ত ভাবেন – পুরো ব্যাপারটি উকট ধরনের ব্যাতিক্রমধর্মী কিছু, এ নিয়ে ‘ভদ্র সমাজে’ যত কম আলোচনা করা যায় ততই মঙ্গল। উপরে উপরে না বললেও ভিতরে ভিতরে ঠিকই মনে করেন  সমকামীরা তো হচ্ছে গা ঘিন ঘিনে বিষ্ঠাকৃমি জাতীয় এঁদো জীব।  মরে যাওয়াই মনে হয় এদের জন্য ভাল।  সমাজ সভ্যতা রক্ষা পায় তাহলে।
আমি এই  প্রবন্ধে বৈজ্ঞানিক দিক (মুলত জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্সের দৃষ্টিভঙ্গি) থেকে বিষয়টি আলোচনা করব। সামাজিক ও মনস্তাত্বিক ধ্যান-ধারণাগুলো আলোচনায় আসবে পরে, প্রবন্ধের  শেষ দিকে। বাংলা সহ  পৃথিবীর তাব সাহিত্যগুলোতে সমকামিতার উল্লেখ এবং পরিশেষে বিভিন্ন খ্যাতনামা সমকামীদের জীবন নিয়েও খানিকটা গভীরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।  তবে সেগুলো আসবে ধীরে ধীরে।



নিঃসন্দেদেহে এ ধরনের প্রবন্ধের কলেবর দীর্ঘ হয়। কিন্তু মুক্তমনার পাঠকদের সুবিধার জন্য আমি প্রবন্ধটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দিব বলে মনস্থ করেছি।   প্রথম দিকের পর্বগুলো মুলত বৈজ্ঞানিক পরিমন্ডলেই সীমাবদ্ধ থাকবে।  আজকের পর্বটি পুরো প্রবন্ধটির ছোটখাট ভুমিকা হিসেবে ধরা যেতে পারে।  একটি দীর্ঘ প্রবন্ধকে ফোরাম বা ওয়েব-সাইটের জন্য ভাগ ভাগ করে ছোট রূপ দেওয়ার চেষ্টা করার কিছুটা অসুবিধাও আছে।  মনে হতে পারে  পর্বটা হঠা করে শেষ হয়ে গেল, কিংবা প্রতিটি কোনা-কাঞ্চি নিয়ে ঠিকমত আলোচনা করা হয়নি।  সেরকম মনে হলে, আমি পাঠকদের বিনীতভাবে ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করব।  বলব, পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।  আপনাদের প্রত্যাশিত প্রতিটি বিষয় নিয়েই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে।

আমি শুরু করছি ভুল ভাবে ব্যবহৃত কিছু মন্তব্য দিয়ে, যা সমকামিতার বিরুদ্ধে প্রায়শই ব্যবহার করা হয় :

“সমকমীতা প্রাকৃতিক কোনোভাবেই হতে পারে না মূলত (নারী-পুরুষে) কামটাই প্রাকৃতিক”

কিংবা অনেকে এভাবেও বলেন -

“নারী আর পুরুষের কামই একমাত্র প্রাকৃতিক যা পৃথিবীর সকল পশু করে। যার মূল লক্ষ্য হলো বংশ বৃদ্ধি” 

উক্তিগুলো স্রেফ উদাহরণ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।  অনেকেই সমকামিতাকে  ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ বা ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে প্রতিপন্ন করার জন্য উপরোক্ত ধরণের যুক্তির আশ্রয় নেন।  আমি এই উক্তির পেছনের যুক্তিগুলো নিয়েই মূলতঃ আলোচনা করব।

আসলে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ , ‘অস্বাভাবিক’, ‘প্রাকৃতিক নয়’  –এই ধরণের শব্দচয়ন করার আগে  এবং তা  ঢালাওভাবে তা প্রয়োগ করার আগে  কিন্তু খোলা মনে পুরো বিষয়টি আলোচনার দাবী রাখে।  এই বাংলাতেই এমন একটা সময় ছিল যখন বাল্যবিবাহ করা ছিল ‘স্বাভাবিক’ (রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম সহ অনেকেই বাল্যবিবাহ করেছিলেন) আর মেয়েদের বাইরে কাজ করা ছিল ‘প্রকৃতি বিরুদ্ধ’।  সয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত মেয়েদের বাইরে কাজ করার বিপক্ষে একটা সময় যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন  এই বলে  

‘যেমন করেই দেখ প্রকৃতি বলে দিচ্ছে যে, বাইরের কাজ মেয়েরা করতে পারবে না। যদি প্রকৃতির সেরকম অভিপ্রায় না হত, তা হলে মেয়েরা বলিষ্ঠ হয়ে জন্মাতো। যদি বল,পুরুষদের অত্যাচারে মেয়েদের এই দুর্বল অবস্থা হয়েছে, সে কোন কাজেরই কথা নয়।‘

অর্থা,   রবীন্দ্রনাথের যুক্তি এখন মানতে গেলে কপালে টিপ দিয়ে, হাতে দু-গাছি সোনার বালা পরে গৃহকোণ উজ্জ্বল করে রাখা রাবীন্দ্রিক নারীরাই সত্যিকারের ‘প্রাকৃতিক’, আর  শত সহস্র আমিনা, রহিমারা যারা প্রখর রোদ্দুরে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে ইট ভেঙ্গে, ধান ভেনে সংসার চালাচ্ছে, কিংবা পোষাক শিল্পে নিয়োজিত করে পুরুষদের পাশাপাশি ঘামে শ্রমে নিজেদের উজার করে চলেছে – তারা সবাই আসলে ‘প্রকৃতি বিরুদ্ধ’ কুকর্মে নিয়োজিত – কারণ, ‘প্রকৃতিই বলে দিচ্ছে যে, বাইরের কাজ মেয়েরা করতে পারবে না’।  বাংলাদেশের অখ্যাত আমিনা, রহিমাদের কথা বাদ দেই,  আমেরিকার নাসা থেকে শুরু করে মাইনিং ফিল্ড পর্যন্ত এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে মেয়েরা পুরুষদের পাশাপাশি আজ কাজ করছেন না।   তাহলে? তাহলে আর কিছুই নয়।  নিজের যুক্তিকে তালগাছে তোলার ক্ষেত্রে ‘প্রকৃতি’ খুব সহজ একটি মাধ্যম, অনেকের কাছেই।  তাই প্রকৃতির দোহাই পাড়তে আমরা ‘শিক্ষিত জনেরা’ বড্ড ভালবাসি।  প্রকৃতির দোহাই পেড়ে আমরা মেয়েদের গৃহবন্দি রাখি, জাতিভেদ বা বর্ণবাদের পক্ষে সাফাই গাই, অর্থনৈতিক সাম্যের বিরোধিতা করি, তেমনি সময় সময় সমকামি, উভকামিদের বানাই অচ্ছু।  কিন্তু যারা যুক্তি নিয়ে একটু আধটু পড়াশোনা করেছেন তারা  জানেন যে, প্রকৃতির দোহাই পাড়লেই তা যুক্তিসিদ্ধ হয় না। বরং প্রকৃতির কাঁধে বন্ধুক রেখে মাছি মারার অপচেষ্টা  জন্ম দেয় এক ধরণের কুযুক্তি বা হেত্বাভাসের (logical fallacy)।  ইংরেজীতে এই ফ্যালাসির পুথিগত নাম হল -   ‘ফ্যালাসি অব ন্যাচারাল ল বা  অ্যপিল টু নেচার ’  ।   এমনি কিছু ‘অ্যপিল টু নেচার’ হেত্বাভাসের উদাহরণ  দেখা যাক -

১। মিস্টার কলিন্সের কথাকে এত পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। কলিন্স ব্যাটা তো কালো। কালোদের বুদ্ধি সুদ্ধি একটু কমই হয়। কয়টা কালোকে দেখেছ বুদ্ধি সুদ্ধি নিয়ে কথা বলতে? প্রকৃতি তাদের পাঁঠার মত গায়ে গতরে যেটুকু বাড়িয়েছে, বুদ্ধি দিয়েছে সেই অনুপাতে কম। কাজেই তাদের জন্মই হয়েছে শুধু কায়িক শ্রমের জন্য, বূদ্ধিবৃত্তির চর্চার জন্য নয়।

২। মারামারি, কাটাকাটি  হানাহানি, অসাম্য প্রকৃতিতেই আছে ঢের। এগুলো জীবজগতের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কাজেই আমাদের সমাজে যে অসাম্য আছে, মানুষের উপর মানুষের যে শোষণ চলে তা খারাপ কিছু নয়, বরং ‘কম্পলিটলি ন্যাচারাল’।

৩। প্রকৃতি বলে দিচ্ছে যে, বাইরের কাজ মেয়েরা করতে পারবে না। যদি প্রকৃতির সেরকম অভিপ্রায় না হত, তা হলে মেয়েরা বলিষ্ঠ হয়ে জন্মাতো।

৪। সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ।  প্রকৃতিতে তুমি কয়টা হোমোসেক্সুয়ালিটির উদাহরণ দেখেছ?

এমনি উদাহরণ দেওয়া যায় বহু।

উপরের উদাহরণগুলো দেখলে বোঝা যায়, ওতে যত না যুক্তির ছোঁয়া আছে, তার চেয়ে ঢের বেশি লক্ষনীয় ‘প্রকৃতি’ নামক মহাস্ত্রকে পুঁজি করে পশ্চাদেশ দিয়ে পাহাড় ঠেলার প্রবণতা।  কাজেই বোঝা যাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ট ষাঁড়দের স্বভাবজাত অ্যপিল টু নেচার-এর শিকার  হচ্ছে সমকামীরা। সমকামিদের প্রতি সুপরিকল্পিত উপায়ে এবং সাংগঠিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘৃণা। সমকামিতাকে একটা সময় দেখা হয়েছে মনোবিকার, মনোবৈকল্য বা বিকৃতি হিসেবে।  সমকামিদের অচ্ছু বানিয়ে এদের সংস্রব থেকে দূরে থাকার প্রবণতা অনেক দেশেই আছে। শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার তো আছেই, কখনো এদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে আত্মহননের পথে। আর এগুলোতে পুরোমাত্রায় ইন্ধন যুগিয়ে চলেছে ধর্মীয় সংগঠন এবং রক্ষণশীল সমাজ।  সমকামিদের প্রতি হিংসাত্মক মনোবৃত্তির কারণে ইংরেজীতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন একটি শব্দ – হোমোফোবিয়া (Homophobia) । মানবাধিকারের দৃষ্টিকোন থেকে এটি নিতান্ত অন্যায়।  মানবাধিকার এবং সমানাধিকারের প্রেক্ষাপট থেকে এগুলো নিয়ে পরে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে।  তার আগে সমকামিতা বলতে আসলে কি বোঝায় তা আমাদের জানা দরকার।


সমকামিতার ইংরেজী প্রতিশব্দ হোমোসেক্সুয়ালিটি তৈরি হয়েছে গ্রীক ‘হোমো’ এবং ল্যাটিন ‘সেক্সাস’ শব্দের সমন্বয়ে। ল্যাটিন ভাষায়ও ‘হোমো’ শব্দটির অস্তিত্ব রয়েছে। তবে ‘ল্যাটিন হোমো’ আর ‘গ্রীক হোমো’ কিন্তু সমার্থক নয়।  ল্যাটিনে হোমো অর্থ মানুষ। ওই যে আমরা নিজেদের  হোমোস্যাপিয়েন্স ডাকি – তা এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে।  কিন্তু গ্রিক ভাষায় ‘হোমো’ বলতে বোঝায় ‘সমধর্মী’ বা ‘একই ধরণের’।  আর সেক্সাস শব্দটির অর্থ হচ্ছে যৌনতা।  কাজেই একই ধরনের অর্থা, সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করার (যৌন)প্রবৃত্তিকে বলে  হোমোসেক্সুয়ালিটি।  আর যারা সমলিঙ্গের প্রতি এ ধরনের আকর্ষণ বোধ করেন, তাদের বলা হয় হোমোসেক্সুয়াল।  সমকামিতার ইতিহাস প্রাচীন হলেও ইংরেজীতে শব্দটির ব্যাবহার কিন্তু খুব প্রাচীন নয়। একশ বছরের কিছু বেশি হল শব্দটি চালু হয়েছে। শুধু ইংরেজী কেন, ইউরোপের বিভিন্ন ভাষাতেও সমকামিতা এবং সমকামিতার বিভিন্নরূপকে বোঝাতে কোন উপযুক্ত শব্দ প্রচলিত ছিল না।  বাংলায় ‘সমকামিতা’ শব্দটি এসেছে বিশেষণ পদ -‘সমকামী’ থেকে।  আবার সমকামী শব্দের উস নিহিত রয়েছে সংস্কৃত ‘সমকামিন’ শব্দটির মধ্যে। যে ব্যক্তি সমলৈঙ্গিক ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করে তাকে ‘সমকামিন’ বলা হত।  সম এবং কাম শব্দের সাথে ইন প্রত্যয় যোগ করে ‘সমকামিন’ (সম + কাম + ইন্) শব্দটি সৃষ্টি করা হয়েছে।  আমার ধারণা সমকামিতা নামের বাংলা শব্দটির ব্যাবহারও খুব একটা প্রাচীন নয়। প্রাচীনকালে সমকামীদের বোঝাতে  ‘ঔপরিস্টক’ শব্দটি ব্যবহৃত হত। যেমন, বাসায়নের কামসূত্রের ষষ্ঠ অধিকরণের নবম অধ্যায়ে সমকামীকে চিহ্নিত করতে ‘ঔপরিস্টক’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যদিও পরবর্তীকালে এ শব্দের বহুল ব্যবহার আর লক্ষ্য করা যায় নি, বরং ‘সমকাম’ এবং ‘সমকামী’ শব্দগুলোই কালের পরিক্রমায় বাংলাভাষায় স্থান করে নিয়েছে।  কেউ কেউ সমকামিতাকে আরেকটু ‘শালীন’ রূপ দিতে ‘সমপ্রেম’ শব্দটির প্রচলন ঘটাতে চান , অনেকটা ইংরেজীতে আজকের দিনে ব্যবহৃত ‘গে’ বা ‘লেসবিয়ন’ শব্দের মত।

এখন কথা  হচ্ছে সমকামিতা কি  জন্মগত নাকি  আচরণগত?  এটি বুজতে হলে আমাদের যৌনপ্রবৃত্তিকে বুঝতে হবে। আজকের দিনের মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন যৌন-প্রবৃত্তির ক্যানভাস আসলে সুবিশাল।  এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ (বিষমকামিতা) যেমন দৃষ্ট হয়, তেমনিভাবেই দেখা যায় সম লিঙ্গের মানুষের মধ্যে প্রেম এবং যৌনাকর্ষণ।  বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি এরা কোন যৌন-আকর্ষণ বোধ করে না, বরং নিজ লিঙ্গের মানুষের প্রতি এরা আকর্ষন বোধ করে।  এদের যৌনরুচি এবং যৌন আচরণ  এগুতে থাকে ভিন্ন ধারায় ।  ব্যাপারটি অস্বাভাবিক নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের বাইরে অথচ স্বাভাবিক এবং সমান্তরাল ধারায় অবস্থানের কারণে এধরনের যৌনতাকে অনেক সময় সমান্তরাল যৌনতা (parallel sex) নামেও অভিহিত করা হয়।  সমান্তরাল যৌনতার ক্ষেত্র কিন্তু খুবই বিস্তৃত।  এতে সমকামিতা যেমন আছে তেমনি আছে উভকামিতা, কিংবা দুটোই, এমনকি কখনো রূপান্তরকামিতাও।  আমি আমার প্রবন্ধ মূলতঃ ‘সমকামিতা’ বিষয়েই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করব, যদিও অন্যান্য যৌন-প্রবৃত্তিগুলো (যেমন রূপান্তরকামিতা)ও বিভিন্ন সময় আলোচনায় উঠে আসবে।   আজকের দিনের বিজ্ঞানীরা বলেন, সমকামিতা নিঃসন্দেহে যেমন আচরণগত হত পারে, তেমনি  হতে পারে জন্মগত বা প্রবৃত্তিগত।  যাদের সমকামী যৌনপ্রবৃত্তি জন্মগত, তাদের যৌন-প্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করা যায় না, তা সে থেরাপি দিয়েই হোক, আর ঔষধ দিয়েই হোক।  মানুষের মস্তিস্কে হাইপোথ্যালমাস নামে একটি অংগ রয়েছে, যা মানুষের যৌন প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে।  সিমন লিভের শরীরবৃত্তীয় গবেষণা থেকে জানা গেছে এই হাইপোথ্যালমাসের  interstitial nucleus of the anterior hypothalamus, বা সংক্ষেপে INAH3 অংশটি সমাকামিদের ক্ষেত্রে আকারে অনেক ভিন্ন হয় ১৮।  আরেকটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ডিন হ্যামারের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে।  ডিন হ্যামার তার গবেষণায়  আমাদের ক্রোমোজমের যে অংশটি (Xq28) সমকামিতা ত্বরান্বিত করে তা শনাক্ত  করতে সমর্থ হয়েছেন ১৮।  এছারাও আরো বিভিন্ন গবেষণায় মনস্তাত্বিক নানা অবস্থার সাথে পিটুইটরি, থাইরয়েড, প্যারা-থাইরয়েড, থাইমাস, এড্রিনাল সহ বিভিন্ন গ্রন্থির সম্পর্ক  আবিস্কৃত হয়।  যদিও ‘গে জিন’ বলে কিছু এখনো আবিস্কৃত হয়নি, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফলের অভিমুখ কিন্তু সেই দিকেই (আমি এদের গবেষণা নিয়ে পরে আরো আলোচনা করব)। এই ধরণের গবেষণা সঠিক হয়ে থাকলে বলতেই হয় সমকামী মনোবৃত্তি হয়ত অনেকের মাঝেই জন্মগত না জেনেটিক, আরো পরিস্কার করে বললে, ‘বায়োলজিকালি হার্ড-ওয়্যার্ড’।   জন্মগত সমকামিরা ‘বায়োলজিকালি হার্ড-ওয়্যার্ড’ হলেও আচরণগত সমকামিরা তা নয়। এরা আসলে বিষমকামী।  এরা কোন ব্যক্তিকে বিষমলিঙ্গের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের সাথে যৌন-সংসর্গে লিপ্ত হয়।  যেমন, জেলখানায় দীর্ঘদিন আটকে থাকা বন্দীরা যৌনসঙ্গীর অভাবে সমলিঙ্গের কয়েদীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেত পারে।  কিন্তু, জেলখানা থেকে বেরিয়ে এলেই দেখা যায়, এদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে।  বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজের ছেলেপিলেদের সম্পর্কেও এ ধরনের ধারণা প্রচলিত আছে।  এই ধরণের যৌন প্রবৃত্তির বাইরেও আছে উভকামিতা, কিংবা আছে উভকামিতার সমকামিতা। আলফ্রেড কিন্সে এই ধরনের বিভিন্ন যৌনতাকে পরিমাপ করার জন্য ‘যৌনতা বিষয়ক স্কেল’ উদ্ভাবন করেন। এই স্কেলের এক প্রান্তে আছে পরিপূর্ণ বিষমকাম, অন্যপ্রান্তে পরিপূর্ণ সমকাম। দুই মেরুর মাঝামাঝি রিয়েছে বিভিন্ন পর্যায়- প্রধাণতঃ বিষমকাম, তবে প্রায়ই সমকাম; সমান সমান বিষমকাম এবং সমকাম; প্রধানত সমকাম তবে প্রায়ই বিষম কাম; প্রধাণত সমকাম, তবে মাঝে মধ্যে বিষমকাম ইত্যাদি। কিন্সের এ স্কেল নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও এটি অন্ততঃ বোঝা যায় যে, আমাদের যৌন-প্রবৃত্তির ক্যানভাস আসলে খুবই বিস্তৃত, এবং যৌন প্রবৃত্তি একইভাবে সকলের মাঝে ক্রিয়াশীল হয় না।

যৌন প্রবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রাসঙ্গিকভাবেই সেক্স বা যৌনতার  উদ্ভব নিয়ে কিছু না কিছু বলতে হয়। রিচার্ড ডকিন্সের ‘ বিবর্তনীয় স্বার্থপর জিন’ (selfish gene)  তত্ত্ব সঠিক হয়ে থাকলে বলতেই হবে যৌনতার উদ্ভব নিঃসন্দেহে প্রকৃতির একটি মন্দ অভিলাস (bad idea) ।  কারণ দেখা গেছে অযৌন জনন (asexual) প্রক্রিয়ায় জিন সঞ্চালনের মাধ্যমে যদি বংশ বিস্তার করা হয় (প্রকৃতিতে এখনো অনেক এককোষী জীব, কিছু পতংগ, কিছু সরিসৃপ এবং কিছু উদ্ভিদ- যেমন ব্ল্যাক বেরি  অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে থাকে) তবে বাহকের পুরো জিনটুকু অবিকৃত অবস্থায় ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত করা যায়।  কিন্তু সে বাহক যদি যৌন জননের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে থাকে, তবে  তার জিনের অর্ধেকটুকুমাত্র ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত হয়।  কাজেই দেখা যাচ্ছে যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে বংশবিস্তার করলে এটি বাহকের জিনকে ভবিষ্যত প্রজন্মে স্থানান্তরিত করবার সম্ভাবনাকে সরাসরি অর্ধেকে নামিয়ে আনে।  এই অপচয়ী প্রক্রিয়ার আসলে কোন অর্থই হয় না। কারণ,  প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মুল নির্যাসটিই হল – প্রকৃতি তাদেরই টিকে থাকার ক্ষেত্রে তাদেরকেই বাড়তি সুবিধা দেয় যারা অত্যন্ত ফলপ্রসু ভাবে নিজ জিনের বেশি সংখ্যক অনুলিপি  ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত করতে পারে । সে হিসাবে কিন্তু  অযৌন জননধারীরা (আমরা এখন থেকে এদের ‘অযৌনপ্রজ’ নামে ডাকব) বহু ধাপ এগিয়ে আছে যৌনধারীদের (এদের ডাকব ‘যৌনপ্রজ’ নামে) থেকে।

কারণ অযৌনপ্রজদের  যৌনপ্রজদের মত সময় নষ্ট করে সঙ্গী খুজে জোড় বাঁধতে হয় না।  সংগম করে করে শক্তি বিনষ্ট করতে হয় না।  নিজের বা সঙ্গির বন্ধ্যাত্ব নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। বুড়ো বয়সে ভায়াগ্রা সেবন করতে হয় না। কিংবা সন্তানের আশায় হুজুর সাঈদাবাদীর কাছে ধর্ণা দিতে হয় না।   যথাসময়ে এমনিতেই তাদের বাচ্চা পয়দা হয়ে যায়।  কিভাবে? আমরা এখন যে ক্লোনিং –এর কথা জেনেছি, এদের প্রক্রিয়াটা অনেকটা সেরকম। এক ধরনের ‘প্রাকৃতিক ক্লোনিং’ এর মাধ্যমে এদের দেহের  অভ্যন্তরে নিষেক ঘটে চলে অবিরত।  ফলে কোন রকম শুক্রানুর সংযোগ ছাড়াই দেহের ডিপ্লয়েড ডিম্বানুর নিষেক ঘটে চলে।  জীববিজ্ঞানে  এর একটি গালভরা নাম আছে – পার্থেনোজেনেসিস (Parthenogenesis)।


কাজেই পার্থেনোজেনেসিস নামধারী অযৌনপ্রজরা সত্যিকার অর্থেই অপারাজেয়, অন্ততঃ যৌনপ্রজদের তুলনায়। এদের কোন পুরুষ সঙ্গীর দরকার নেই। সবাই এক এক জন মাতা মরিয়ম – সয়ম্ভু যীশু উপাদনে পারঙ্গম। যৌনপ্রজরা যে সময়টা ব্যয় করে সংগি খুঁজে তোষামোদ, আদর সোহাগের পশরা খুলে ধুঁকতে ধুঁকতে জিন সঞ্চালন করে, সে সময়ের মধ্যে অযৌনপ্রজরা গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চা পয়দা করে ফেলতে পারে – এবং বাইরের কারো সাহায্য ছাড়াই।  ফলে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে’ এরা বাড়তে থাকে গুনোত্তর হারে।  নীচে এরকম একটি অযৌনপ্রজ প্রজাতি “হুইপটেল গিরগিটি”র ছবি দেওয়া হল।

চিত্রঃ হুইপ্টেল গিরগিটি – অযৌনপ্রজ প্রজাতির হার্টথ্রব। এদের বংশবিস্তারের জন্য কোন পুরুষ সঙ্গির প্রয়োজন নেই।

মজার ব্যাপার হল এই  হুইপটেল গিরগিটিকূলের সবাই মহিলা, আর তা হবে নাই বা কেন! তাদের ত কোন পুরুষ শয্যাসংগীর দরকার নেই। পুরুষেরা তাদের জন্য ‘বাহুল্যমাত্র’।  কিন্তু তারপরও তাদের মধ্যে সেক্স- সদৃশ একধরনের ব্যাপার ঘটে।  দেখা গেছে এক গিরগিটি আরেক গিরগিটিকে যদি জড়িয়ে ধরে রাখে তাহলে তাদের ডিম পাড়ার হার বেড়ে যায়  ।  প্রকৃতির সমকামী প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ! আমাদের কাছে যত অস্বাভাবিক বা প্রকৃতিবিরুদ্ধই মনে হোক না কেন,  হুইপটেল গিরগিটি বা এ ধরনের সরিসৃপদের কাছে কিন্তু এটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা, এবং এরা এভাবেই প্রকৃতিতে টিকে আছে, এবং টিকে আছে খুব ভালভাবেই। ২০০৬ সালে সরিসৃপকুলের আরেক প্রজাতি কমোডো ড্রাগন (Komodo Dragon) কোন পুরুষসঙ্গী ছাড়াই লন্ডনের চিড়িয়াখানায় বাচ্চা পয়দা করে রীতিমত আলোড়ন ফেলে দেয় ৯, ১০ 

চিত্রঃ কমোডো ড্রাগন কোন পুরুষসঙ্গী ছাড়াই লন্ডনের চিড়িয়াখানায় বাচ্চা প্রসব করে রীতিমত আলোড়ন ফেলে দেয়।

বিজ্ঞানীরা ২০০১ সালে নেব্রাস্কার ডুরলি চিরিয়াখানার হাতুরীমুখো হাঙ্গরেরও (Hammerhead shark) প্রজনন লক্ষ্য করেছেন কোন পুরুষসঙ্গির সাহায্য ছারাই১১। এগুলো সবই পার্থেনোজেনেসিস-এর খুবই স্বাভাবিক উদাহরণ। পার্থেনোজেনেসিসের আরো ভাল উদাহরণ খুঁজতে চাইলে বাংলাদেশের খোদ ঢাকা শহরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চলে যেতে পারেন। শুনেছি, আঁশ পোকা নামে এক বদখদ পোকায় নাকি ছেয়ে গেছে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার গাছপালা ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দারা রীতিমত আস্থির। প্রথম আলোতে এ নিয়ে রিপোর্ট পর্যন্ত হয়েছিল। বংশবৃদ্ধির জন্য এ পোকার কোন পুরুষ লাগে না, মাদী পোকাটি একাই হাজারে হাজার ডিম পেড়ে পঙ্গপালের মত বংশবৃদ্ধি করে আর আশেপাশের গাছপালাগুলোকে ছিবড়া বানিয়ে ফেলে।
 
 


Tuesday, June 16, 2015

ইয়ো চেগুয়েভারা , টোমারে ডেখে আমরা বিপ্লব শিখতেশি , দাড়ি রাখতেশি , বিড়ি খাইতেশি……


গতকাল আমড়া এমন মজা করশি । কি আর বলব । হইল কি , তখন দুপুর তিনটা বাজে । আমি ভার্শিটি থেকে এইসে ঘুমাইতেশি । এমন টাইমে আমার সেলটা বাজল । আমি আমাড় নোকিয়া এন এইটটা হাতে নিয়ে ডেখি আদনানের নাম্বার । আমড়া অবশ্য আমাদেড় ফ্রেন্ড সার্কেলে নামটাকে ছোট কড়ে “আডস” ডাকি । আমি ফোন টুলে বললাম
- এই , কি হইশে ?
- রশ , ম্যান টুই কি করতেশিশ ? বাইর হবি না ?
- কেন ?
- ওহ ডুড , টুই কি ভুলে গেশিশ , আজকে চে গুয়েভারা নিয়ে অনুষ্ঠান আছে না ……
- ফাক ম্যান !! আমি টো ভুইলাই গেশিলাম । এই তোরা খাড়া , আমি আশতেশি ।
আমি তাড়াতাড়ি উঠলাম । আমার কাশে চে গুয়েভারাকে ড্যাম কুল লাগে । ওর ফেসটা অনেক ম্যনালি । আমিও কিশুদিন দাড়ি রেখে ওর মত করার ট্রাই করশিলাম , কিন্তু আমাকে অত ভাল লাগে নাই । চে গুয়েভারা পুরা নামটা যেন কী ? উফ শিট ভুইলা গেশি । প্রটিডিনই ভাবি যে নেট থেকে চে গুয়েভারার উপ্রে সব জানব , কিন্তু শেষে খেয়াল থাকে না ।
আমি আমাড় আলমাড়িটা খুললাম । চে’র ছবিওয়ালা দশটা গেন্জি আছে । আমি বাইছা বাইছা লাল রঙেরটা পড়লাম । ধানমন্ডি লেকে আজকে ফারিয়াও আসবে , ও বলশে যে সোলড্যান্স থেকে কিনা বারশ টাকার এই লাল গেন্জিটাতে আমাকে খুব কিউট লাগে । বাই দা ওয়ে , ফারিয়া আমার গার্লফ্রেন্ড এন্ড দা বিচ ইজ ড্যাম হট !
গেন্জি আড় জিন্স পড়ে আমি পনড় মিনিট ধরে আয়নাড় সামনে নিজেকে দেখলাম । তারপর আধাঘন্টা ধরে ডিসিশান নেয়ার ট্রাই কড়লাম চুল কিভাবে আচড়াব ।
শেষ পর্যন্ত চুল আচড়ে , শেভ করে গায়ে পাচটা বডিস্প্রে ছিটায়ে আমি ঘর থেকে বেড় হলাম ।
আব্বার ঘর নীচতলায় । এই সময় বাসায় আব্বাকে পাওয়া যায় না । বাট আই ওয়াজ লাকী । দেখলাম আব্বা ঘড়েই আছে । আব্বার অনেক টাকা । বিজনেস কড়ে কড়ে আব্বা টাকা বানাইশে । টবে আব্বা আমাড় মত কুল না । আমি যেন কুল হইতে পারি সেজন্যে আব্বা আমাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াইশে , আড় এখন একটা প্রাইভেট ভার্শিটিতে ভর্তি করশে । এখানে ভর্তি হইতেও প্রচুড় টাকা লাগশে ।কত লাগশে আমি জানি না । আব্বা বলশে ঢাকা ভার্শিটির পড়িবেশ ভাল না । আমাড়ও টাই মনে হয় । গ্রাম থেকে শব ক্ষ্যাত পোলাপান এখানে পঢ়তে আশে । এদের সাথে বসে ক্লাস করব এটা আমি ভাবতেই পারি না । আব্বা বলশে কোন ভাবে বিবিএ ডিগ্রী নিতে পারলেই আমাকে বিজনেসে ঢুকাই দিবে ।
আমি আব্বাকে বললাম
- আব্বা তিনহাজার টাকা দাও ….
- কেন কি করবি ?
- বাইরে যাইতেশি , ডাও টো………
আব্বা টাকা বের করে দিল । আব্বা কখনও টাকা নিয়ে ঝামেলা কড়ে না । আমি একমাত্র ছেলে তো আমাকে টাই আব্বা আম্মা খুব আদর করে । আমি আম্মাকে ‘বাই’ বলে বাইড়ে চলে এলাম । গাড়ি নিলাম না । আদনান বলশে ও গাড়ি নিয়ে আসবে ।
দেখলাম আমার বাসার সামনেই আদনান গাড়ি নিয়ে দাড়ায়ে আছে । আমি লেট কড়ার জন্য সরি বলে গাড়িতে উঠলাম । গাড়ি আদনান চালাইতেশে । আদনানের পাশের সিটে ওর গার্লফ্রেন্ড রিমি । রিমি মেয়েটা অনেক কিউট । ও একটা স্কিন টাইট গেন্জি আর জিন্স পড়শে । গেন্জিতে চে’ আঁকা । ওকে এত্ত জোস লাগতেশে । ও আমার ডিকে টাকায়া হাসল । আমিও হাসলাম ।
আদনানের এই সেলিকা গাড়িটা নতুন । আমারও সেলিকা আছে । আমারটা আজকে বাইড় করা হইল না । গাড়িতে আরো দুটা ছেলে আর একটা মেয়ে আছে । একটা ছেলেকে আমি চিনি না । ওজানি একটু কিড়কম । মুখ ভর্তি দাড়ি । আমি পরিচিত হলাম । জানলাম ওড় নাম রাশেদ ( কিড়কম ক্ষ্যাত একটা নাম না ?) । ও আমাকে বলল
-তুমি কি কম্যুনিজম কর ?
- অফকোর্স ম্যান.. আমরা সবাই কম্যুনিস্ট । আমরা সবাই সাম্যবাদী ।
এই কথাটা আগে বলা হয় নাই । আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের আমরা সবাই কম্যুনিস্ট । আমাদের এফবির প্রোফাইলে এটা লেখা আছে । political view – communist , religious view – atheist……………. । আমাদের একটা ‘গ্যাং’ আছে । কম্যুনিস্ট গ্যাং । নাম হল BIPLOBIZ । আমড়া ড়াতের বেলা ধানমন্ডিড় ডেয়ালে ডেয়ালে এই নামটা লিখি স্প্রে পেন্ট ডিয়ে । আমরা এত্তো খাড়াপ !
আমি গত একবছর ধরে ‘এথিস্ট’ হইশি । আজকাল ‘এথিস্ট’ না হইলে সবাই কুল বলে না ।

ধানমন্ডি লেকে অনুষ্ঠান হইতেশে । ড্যাম ম্যান । এখানে এত্ত ক্রাউড । রিক্সাওয়ালা টাইপেড় নোংরা নোংরা লোকগুলা হাঁ করে তাকায়া থাকে , গায়ে গা লাগায়ে ডাড়ায় । ওদেড়কে দেখলেই আমার কেমন জানি ঘিন্না লাগে । আমি ফারিয়াকে খুঁজে পাইলাম ।ফারিয়ার সাথে আরও ডুটা ফ্রেন্ড আশছে । ইফতি আর অনিক । ফারিয়া আমাকে দেখেই ‘হায় বেবি’ বলে চিৎকার ডিল । ও যে কি করে না! তারপর আইশে জড়ায়ে ধরল । আশেপাশের সব লোক হাঁ করে তাকাচ্ছে । কতগুলা বস্তির মাস্তান টাইপের ক্ষ্যাত পোলাপান কমেন্ট করতেশে । এইশব ফালতু পোলাপানগুলারে নিয়ে সমস্যা । যেখানেই যাই , ছোটলোকের বাচ্চাগুলা আমাদের সাথের মেয়েগুলার ডিকে হাঁ করে টাকায়া থাকে , চান্স পাইলে গায়ে হাত ডেয় ।
আমি লেকের ডিকে টাকালাম । একটা বড় ডিজিটাল স্ক্রীনে লালের মধ্যে চে গুয়েভারার ছবি জ্বলজ্বল করতেশে । কবিটা আবৃত্তি হইতেশে , গান হইতেশে কিন্তু আমাড় মনে হয় না স্টেজের কাছাকাছি থাকা কয়েকজন ছাড়া আর কেউ এগুলা শুনতেশে ।আমি আশেপাশের লিকজনকে কয়েকটাভাগে ভাগ কড়লাম । একদল হল রিকসাওয়ালা চাওয়ালা টাইপের লোকজন , এরা মজা দেখতেশে কিন্তু কিশুই বুজতেশে না । আরেকদল হল ওর্গানাইজারদের বন্ধু-বান্ধব-ভাই-বেরাদার । কবিটা , গান এইসব শিট্ গুলা এরাই ইন্টারেস্ট নিয়ে শুনতেশে । আরেকদল হল আমাদের মত কুল পোলাপান ,যারা চে’র ব্যপারে আসলেই সিরিয়াস । আর বাকী অংশ হল সাধারণ মানুষজন যারা যেকোন জায়গাতেই কোন ফ্রি অনুষ্ঠান এমনকি একটা মাইক দেখলেও ওইখানে বসে যাওয়াটা দ্বায়িত্ব বলে মনে কড়ে ।
ফারিয়া আমাকে বল্ল
- জানু চে গুয়েভারা অন্নেক কিউট , টাই না ?
-হুঁ
-টুমি ওর মত করে দাড়ি রাখ না কেন ?
- রাখশিলাম না একবার , ভাল লাগেনা তো ডেখতে….
- আরে ধুড়…তোমাকে অবশ্যই ভাল লাগবে…..
ফারিয়া আরও কিছুক্ষণ চে’র ছবির ডিকে টাকায়া থেকে বল্ল
- আচ্ছা চে জানি কোন কান্ট্রির ?
- ইয়ে….. মনে পড়তেশে না তো এখন…..
- আচ্ছা বাদ দাও……
আমরা ওখানে দাড়ায়ে ছবি তুললাম ,অনেকগুলা । আশেপাশের লোকজন এমনভাবে টাকায়তেসে যেন আমরা কতগুলা জোকার । শালার এই সোসাইটিটাই ফাউল…. ।
প্রথমে যে মাস্তান টাইপের ছেলেগুলা ফারিয়াকে ডেখতেশিল ওড়া এখনও আশেপাশে ঘুরঘুর করতেশে । আমি খেয়াল রাখতেশি । ওড়া যদি আমাদেড়কে ‘চকলেট’ পোলাপান ভেবে থাকে তাহলে ওরা মিসটেক কড়ল । আমরা খূব খাড়াপ ছেলেপেলে । ধানমন্ডিতে আমাদেরও লীগ করা বড়ভাই আছে । আমাদের মত বড়লোকের পোলাপানদেরকে – যারা বড়ভাইদের বিড়িসিগারেটের খরচ দিয়ে দেয় , কেএফসিতে খাওয়ায় , টাকা ধার ডিয়ে ফেরত চায় না , মাঝেমাঝে এসি গাড়ি করে ঘুরতে দেয় – তাদেরকে লীগের বড়ভাইরা খুব পছন্ড করে । কারণ তারা জানে যে আমড়া বিপ্লবী । আমড়া বারশ টাকা ডিয়ে চে’র ছবি আঁকা গেন্জি পড়ে , পিঠে আটশ টাকা দিয়ে কেনা চে’র ছবি আঁকা ব্যাগ ঝুলায়ে ,বেনসন লাইট টানতে টানতে ঘুড়ে বেড়াই । আমরা এরকম বিপ্লবী । আমাদেড় সাথে ঝামেলা কড়লে খবড় আছে , আমাদের বড়ভাইরা টান দিয়ে ওদের পাছার চামড়া ছিড়ে ফেলবে ।

লেকের এই বাল অনুষ্ঠানে বসার আর কোন মিনিং পাইতেশিলাম না । টাই আমরা রাইফেলস্কয়ারে আসলাম ,সীসা খাইতে । সিসার ধুয়া ছাড়তে ছাড়তে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের গার্লফ্রেন্ডের সাথে মেকাউট কড়লাম । ছবি তুললাম । ধুয়া মুখে নিয়ে ছবি , গার্লফ্রেন্ডরে জড়ায়ে ধরে ছবি । এগুলা সব ফেসবুকে আপলোড যাবে । রাত আটটার দিকে মেয়েরা সবাই বাসায় চলে গেল । আমরা ছেলেড়া চলে আসলাম আদনানের বাসায় । আদনান আগেই উইড যোগাড় করে ড়াখশিল ।প্রত্যেকে একটা করে স্টিক ফাটাইলাম আর হারায়া গেলাম ।
রাত হইশে । আকাশে চাদের আলো । ছাদে আমড়া সবাই পিনিকে । অনিক আর আদনান গিটার বাজায়ে কি জানি একটা গান গাইতেশে । চাদের আলো পইড়া সবার গেন্জিতে চে গুয়েভারার সাদা সাদা মুখগুলা জ্বলজ্বল করতেশে । আমার মনে হল মুখগুলা আমাকে ডেখে মজা পেয়ে ঠোঁট টিপে হাশতেশে ।
এত মজা পাওয়ার কি হইল , বুঝলাম না ।

Originally Collected From: www.cuteblog.com

Monday, June 15, 2015

কোন পিরিতির গল্প কইতেছো মামুরা!!!!

ছোটবেলায় কুফরি কালাম বইলা একটা কথা শুনছিলাম। অনেকটা ব্ল্যাক ম্যাজিক টাইপের ব্যাপার। নামেই বুঝা যায় আল্লাহর পবিত্র কালামের কুফরি ব্যবহারই এর সার কথা। এই সিস্টেমে পবিত্র কোরআন শরীফ নাকি উল্টা কইরা পড়তে হয়, তারপর ইবলিস আইসা বান্দার যাবতীয় মনোবাঞ্ছা পূরণ করবে। অনেকটা গল্পের ডঃ ফসটাসের মতো দ্বীন দুনিয়ার অশেষ ক্ষমতা লাভ হবে শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রির মাধ্যমে। ধারণা করি এই কুফরি কালামের চর্চাটা জামায়াতে ইসলামী এবং তার বশংবদ ইসলামী ছাত্র শিবির বেশ ভালো মতোই করে।
কোরআন শরীফে একজন ঈমানদার মুসলমান হওয়ার যা যা নির্দেশিকা তার ঠিক উল্টাটাই করে যুদ্ধাপরাধীদের এই দলটা। তারা গিবত করে, তারা মিথ্যা প্রপোগান্ডা চালায়, হত্যা করে, ষড়যন্ত্র করে, সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করে, সারাক্ষণ হিংসাদ্বেষ নিয়ে কাটায়। মোটের উপর কবিরা গুনাহ বলতে যা যা লিপিবদ্ধ, তার সবই জামায়াত অনুগতদের নিত্যকার যাপনের অঙ্গ।
অবশ্য এইটাই তো প্রত্যাশিতই। কারণ তারা তো মুসলমান না, মোনাফেক। মুসলমানের ভেকধারী। আল্লাহর নবী বলছেন : শেষ জমানায় কিছু প্রতারক সৃষ্টি হবে। তারা ধর্মের নামে দুনিয়া শিকার করবে। তারা মানুষের নিকট নিজেদের সাধুতা প্রকাশ ও মানুষকে প্রভাবিত করার জন্য ভেড়ার চামড়ার পোষাক পড়বে (মানুষের কল্যাণকারী সাজবে)। তাদের রসনা হবে চিনির চেয়ে মিষ্টি। কিন্তু তাদের হৃদয় হবে নেকড়ের হৃদয়ের মতো হিংস্র। (তিরমিজী) আমার চোখে তো এই শর্তাবলী পূরণে জামায়াত-শিবির ছাড়া আর কিছু পড়ে না।
এত্ত বড় ভূমিকা দিয়া ফেললাম প্রাসঙ্গিক কারণেই। সম্প্রতি ফেসবুক আর ব্লগ মোটকথা অনলাইন ভইরা গেছে জামাতিগো মোনাফেকির নয়া নিদর্শনে। কয়েকটা ছবি কোলাজ কইরা বলা হইতেছে জামায়াত নামে এই ভন্ড ও ছদ্ম মুসলমানের দলটা নাকি আওয়ামী লীগের যুগে যুগে মিত্র, আন্দোলনের সাথী। হেব্বি মার্কেট পাইছে গপ্পোটা। কারণ ছাগুরা কইরা খাইতে পারতেছে কিছু বলদের কারণে। এইসব বেক্কলরে কন ওগো কান চিলে নিয়া গেছে, দেখবেন চিলের পিছে দৌড়াইবো, তাও কানে হাত দিবো না। এই ছাগবান্ধব ভোক্তাকুলই জামায়াতের সকল প্রোপাগান্ডার মূল শক্তি, কারণ এরা তো মাথা খাটায় না। যা গিলাইবেন তাই গিলবো।
তো কোলাজ কইলাম চেঞ্জ হয়। কখনও মুজিব-মওদুদী, কখনও মুজিব-গোলাম আযম দিয়া শুরু স্বাধীনতাপূর্ব আওয়ামী লীগ-জামায়াত পিরিতের। কমন হইলো শেখ হাসিনা ওয়াজেদের এক সংবাদ সম্মেলনে একটা চেয়ারে নিজামীর উপস্থিতি। সঙ্গে মিলাইতে শেখ সেলিমরে আমদানি করা হইছে। নিজামীর লগে হাত মিলাইতেছে। আর ক্যাপশনও মাশাল্লাহ একেক ছবিতে একেক রকম।
ছবিগুলার বর্ণনা দেওয়ার আগে হালকা একটু রাজনীতি নিয়া কথা বলি। পাকিস্তানের জন্য আন্দোলনে জামায়াতের অবস্থান কি ছিলো? আবুল আলা মওদুদী তো পাকিস্তান চায় নাই। সে তো এইটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিছিলো। তো লাড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান শ্লোগান দিয়া যখন মুসলিম লিগের মুজিব রাস্তায় চিল্লাফাল্লা করতেছে তখন মওদুদীর জামায়াত এইটারে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বইলা লোকেরে বুঝাইছে। জামায়াতের জন্ম সিআইয়ের ঔরসে, কম্যুনিজমরে রিলিজিয়ন দিয়া মোকাবেলার জন্য তারা ধর্মীয় লেবাস পড়া একদল খুনি ঘাতক তৈরি করছিলো এই নামে, যেমন ইন্দোনেশিয়ায় লাখো কম্যুনিস্ট হত্যা করছিলো তাগো পোষা ইসলামিস্টরা। এদের নেতা মওদুদী সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়া কাদিয়ানী দাঙার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ মারাইছিলো। এই জন্য তার ফাসির আদেশও হইছিলো যা তার বাপ আমেরিকায় প্রেশার দিয়া ঠেকাইছে। বিশ্বাস হয় না? নীচের তারবার্তা পড়েন ।
তো শেখ মুজিবের লগে মওদুদীর মোলাকাত কি উপলক্ষ্যে? যেই ছবিটায় সে মুজিবের বাম পাশে বসা এবং মুজিব তার মতো মুরুব্বী মাওলানারে দুই পয়সার দাম না দিয়া আপন মনে পাইপ খাইয়া যাইতেছেন ওইটা ১৯৬৬ সালে লাহোরে তোলা। ওইখানে বাঙালীর স্বাধীকার আদায়ের মূলমন্ত্র ছয় দফার ঘোষণা দিছিলেন শেখ মুজিব। পুরা এলাকা বিলা কইরা দেশে ফিরছেন বঙ্গবন্ধু। মওদুদী কি মুজিবের দাবিতে সমর্থন দিছিলো? প্রশ্নই ওঠে না। বরং উস্কানি দিছে মুজিব পাকিস্তান ও ইসলামের লগে শত্রুতা করতেছে। ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ ৬-দফা প্রসঙ্গে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলছেন:
আমার প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা,
আমি পূর্ব পাকিস্তানবাসীর বাঁচার দাবীরূপে ৬-দফা কর্মসূচী দেশব্যাপী ও ক্ষমতাসীন দলের বিবেচনার জন্য পেশ করিয়াছি। শান্তভাবে উহার সমালোচনা করিবার পরিবর্তে কায়েমি স্বার্থবাদীদের দালালেরা আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা শুরু করিয়াছে। অতীতে পূর্ব পাকিস্তানবাসীর নিতান্ত সহজ ও নায্য দাবী যখনই উঠিয়াছে, তখনই এই দালালরা এমনিভাবে হৈচৈ করিয়া উঠিয়াছেন। আমাদের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী, পূর্ব পাক জনগণের মুক্তি-সনদ একুশদফা দাবিযুক্ত নির্বাচন প্রথার দাবী, ছাত্র-তরুণদের সহজ ও স্বল্পব্যয়ে শিক্ষা লাভের দাবী, বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করার দাবী ইত্যাদি সকল প্রকার দাবীর মধ্যেই এই শোষকের দল ও তাহাদের দালালেরা ইসলাম ও পাকিস্তান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করিয়াছেন। …

দ্বিতীয় মোলাকাত ১৯৬৯ সালে রাজনৈতিক দলগুলার সমন্বয়ে গঠিত ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটির (আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি ছিলো খন্দকার মোশতাক আর সৈয়দ নজরুল ইসলাম) সঙ্গে আইউবের রাউন্ড টেবিল বৈঠকে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দী শেখ মুজিব প্যারোলে সেখানে যাইতে অস্বীকৃতি জানাইলেন। ভাসানী এই বৈঠক বর্জন করছিলেন। মুজিবরে ছাড়া বৈঠকে যাবে না বইলা জানাইলো মুসলিম লীগ (সবুর)। মুজিব মামলা থেকে মুক্তি পাইয়া সেখানে গেলেন, এবং আবারও ছয় দফা নিয়াই কথা কইলেন। মওদুদী দিলেন ইসলামী আচরণ বিধির উপর বক্তৃতা যা ঠিকমতো পালন করলে নাকি দুই পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধ থাকবে। মুজিব কনফারেন্স থিকা বাইর হইয়া ভালো মতো ধুইলেন দলগুলারে। যেহেতু তার ছয় দফায় এরা সাপোর্ট দেয় নাই, আওয়ামী লীগ বের হয়ে গেলো ডিএসি থেকে। ডিএসি ডেড।
এরপর আমরা শেখ মুজিবকে লেখা মওদুদীর একটা টেলিগ্রামের কথা জানতে পারি দৈনিক সংগ্রামের সৌজন্যে। ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে প্রকাশিত ওই টেলিগ্রামে মওদুদী আক্ষেপ নিয়া মুজিবরে লিখছে গত দুই বছর ধইরা আপনে আমারে যা তা বলছেন, তাও আমি পাকিস্তান বাচাইতে আপনারে এই টেলিগ্রামটা পাঠাইছি। সো, বোঝা যাইতেছে পীরিতি আছিলো না।
আসি ঘাতক-দালাল শিরোমনি গোলাম আযমের লগে বঙ্গবন্ধুর দোস্তি প্রসঙ্গে। ব্যাপক মাস্তি। মনের মাধুরী মিশায়া ক্যাপশন লিখা হয় এবং ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়। আগে চলেন ছবিটা ছাগুগো ল্যাদানিতে কি কি রূপ পাইছে দেখা যাক।
মূল কোলাজে:

ছবির বিবরণে বলা হইছে ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয়ী হইয়াও ক্ষমতা না পাওয়ায় আওয়ামী লীগ বৈঠকে দলের কর্মসূচী নির্ধারণ করতেছে, আর সেইখানে গোলাম আযম উপস্থিত। গোলাম আযম কি আওয়ামী লীগের নায়েবে আমীর আছিলো নাকি তখন! আওয়ামী লীগের দলীয় বৈঠকে গোলাম ঢোকার আর কোনো সহী তরিকা তো আমি দেখি না। ছবির আসল গল্পটা বলার আগে এই কোলাজের কৌশলটা দেখেন। গোলাম আর বঙ্গবন্ধু দুইজনরে লালচাক্কি দিয়া দাগায়া ভাসুর বানায়া দিছে যেন দুইজনই ডাইন দিকে তাকায়া মিটিং করতেছে। লাল দাগ দিয়া মুজিব যার লগে আড্ডা দিতেছেন চা খাইতে খাইতে কৌশলে গোলদাগ দিয়া তারে আড়াল কইরা দেওয়া হইছে। অথচ গোলাম ওইখানে ছাগলের তিননম্বর বাচ্চার মতো বইসা আছে তার দিকে কারো খেয়াল নাই।
আসেন এইবার মূল গল্পে। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন হইছে। ইয়াহিয়া ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা আইসা বইলা গেছেন শেখ মুজিব ভাবী প্রধানমন্ত্রী। টাল্টিবাল্টি তো শুরু হইলো মার্চে। মুজিব তো জিত্যাই ক্ষমতা দাবি কইরা বসেন নাই যে এক্ষুনি দিতে হইবো। তাইলে ৭০ সালে ওই মিটিং ক্ষমতার দাবিতে হয় নাই। কাহিনী আসলে ঘটছে সেই বছর জানুয়ারিতে। সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর সৈয়দ আহসান সবাইরে ডাকাইছে ডিনারে। সেইখানে আর সবার মতো গোলামও গেছে। রাজনৈতিক দলগুলার প্রধান হিসেবে তার স্ট্যাটাস ওইখানে উপস্থিতদের মধ্যে বলতে গেলে সবার নিচে। কারণ বাকি সবাই্ দলীয় প্রধান হইলেও গোলাম জামাতের আঞ্চলিক আমির মাত্র। তাছাড়া জামাতরে পুছেনি বাঙালী! আর বঙ্গবন্ধু তার লগে অন্তরঙ্গ কথা কইবেন! ছাগুর স্বপ্নদোষ আর কি!
একই অনুষ্ঠানে আরেকটা ছবি আছে। বঙ্গবন্ধু দাড়ায়া আড্ডা দিতেছেন খানএ সবুরসহ আরেকজনের লগে। পাশ দিয়া গোলাম হাইটা যাইতেছে। ওই ছবিটাও এক ছাগু পোস্টে ব্যবহার করছে এই ক্যাপশন লিখা- অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে আলাপরত শেখ মুজিব ও গোলাম আযম! হাহাহাহাহাহাহা। হাহাহাহাহাহা।
আসলে বঙ্গবন্ধু মওদুদীর গেলমান গোলামরে দেখতে পারতেন না। কারণ তার মোনাফেকি। নির্বাচনের আগে থিকাই জামাত কইতেছিলো ছয় দফা হইলো দেশ থিকা ইসলাম নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র। নির্বাচনের আগে নভেম্বরে তাই মুজিব রেডিও ভাষণে বলছেন:
 ..আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য লেবেল সর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসুলে করিম (স.) এর ইসলাম। যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের প্রবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বরাবর যারা অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চণার পৃষ্টপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদেরই বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৫ জনই মুসলমান সে দেশে ইসলাম বিরোধী আইন পাশের সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারেন কেবল তারাই ইসলামকে যারা ব্যবহার করেন দুনিয়াটা ফায়স্তা করে তোলার কাজে।…
কে না জানে এই অপপ্রচার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবহার করে গোলামের গেলমানরা।
কাহিনী এইখানেই শেষ না। ১৯৭০ সালের জুন মাসে এক বক্তৃতায় মুজিব স্পষ্ট কইছেন দেশে মার্শাল ল না থাকলে গোলাম আযমের মতো মীর জাফররে প্লেইনে তুইলা পূর্ব পাকিস্তান থিকা খেদাইয়া দিতেন। দৈনিক সংগ্রামে সেইটার আবার জবাবও দিছে গোলাম। সেইখানে কোটে আছে মুজিব কি কইছিলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এরপর নির্ধারণ কইরা দিছে ইতিহাসে দুইজনের অবস্থান।
ফর দ্য রেকর্ড- কি সেই মীর জাফরী? মুজিব যখন বাঙালীর মুক্তির জন্য ছয় দফারে নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো বানাইছে। তখন গোলাম লাফাইতেছে ৫-দফা নিয়া। কার ৫ দফা। ইয়াহিয়ার ৫ দফা। জামাত সারাজীবনই সেনাবাহিনীর পা-চাটা দল। নিউজ দেখেন:
এইবার আসি কোলাজের দ্বিতীয়ভাগে। শেখ হাসিনার লগে নিজামী নাকি সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দিতেছে। উপরের কোলাজে আছে ’৯৬ সালের কাহিনী এইটা। আবার একই ছবি ফ্লিপ কইরা দেখা যাইতেছে ক্যাপশন সহকারে ৯৫ সালের বানায়া দেওয়া হইছে। দুইখানেই শেখ হাসিনার পরনে কালো ব্যাজ আছে। দুইখানেই টেবিলের সীমানার বাইরে একটা চেয়ারে নিজামী বসা। সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে যার মিনিমাম আইডিয়া আছে তার জানার কথা বক্তাদের আসন কই থাকে। আর রবাহূতদের কোথায়। পরপর দুইবছর নিশ্চয়ই একই স্টাইলে ছবি তোলা হয় নাই।
আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামাত কোথাও সিট ভাগাভাগি করছে? একটা আসনেও? কোনো কালে জোট বাধছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার ১৫ দলীয় জোট, খালেদা জিয়ার ৭ দলীয় জোট। ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা ছিলো জামাত। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার পর এরশাদের লগে আবার পীরিত শুরু, যখন মাঠে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। পরে অবশ্য বোঝা গেছে আসল নাটক, কেডা তাগো পেয়ারি। এখন তো রাখঢাকও নাই। তো সেই মহিলার নাম না নিয়া হঠাৎ শেখ হাসিনার লগে, আওয়ামী লীগের লগে দোস্তি প্রচারের ভিমরতি কেনো হে ছাগুরা!! গোলামের লগে গল্প বানানোর থিকা লিখতা যে ফারুক-রশীদের সঙ্গে প্যান্ডা গার্ডেনে চাইনিজ খাইছে শেখ হাসিনা। ওইটা বরং বিশ্বাসযোগ্য হইতো।

মজার ব্যাপার হইলো শেখ হাসিনা নাকি গোলাম আযমরে পায়ে ধইরা সালাম কইরা দোয়া নিতে গেছিলেন। না কোনো ছবি নাই। তো জামাতের আবার ছবি লাগে নাকি। আপনে মাঠে দাড়ায়া বিড়ি খাইতেছেন, পাশে একটা গরু হয়তো ঘাস খাইতেছে। আপনে যদি আওয়ামী লীগ করেন, পরদিন সংগ্রাম-নয়াদিগন্ত-তমসম বেগম ছাপাইয়া দিবো আপনে মাঠে ঘাস খাইতেছিলেন গরুর লগে। গোলাম আযম সম্পর্কে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত মনোভাব আমি জানি। গোলাম তার ৫০০ গজের মধ্যে নিষিদ্ধ। এবং শেখ হাসিনা যদি কোনোদিন তার নিকটবর্তী হন, সেটাও হবেন তার মুখে থুতু দিতে। এটলিস্ট ওয়াক আওয়াজটা করবেন। জনগনের মতো তিনি তো আর জুতা হাতে নিতে পারেন না। খোদার ঘরের উঠানে তার মতো মোনাফেকরে যেমন জুতাপেটা করছিলো মুসল্লীরা।
কোলাজে আরেকটা অংশ শেখ সেলিম।’৯১ সালের ২৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবল প্রহার করা হইছিলো আলবদর কমান্ডার নিজামীরে।ওরে মাইররে। মাথায় সিলাই পড়ছে। তারপর নাকি শেখ সেলিম তারে দেখতে গেছিলেন। ছবির ক্যাপশনে ওইটাই লেখা। নাকি শেখ সেলিমের বাসায় বিচার নিয়া গেছিলো নিজামী! ছবির মোশন তো ওইরকমই লাগে। নিজামীর বাড়ানো হাতে হাত মিলাইছে শেখ সেলিম। এই ভদ্রতাটা অবশ্যই তার অপরাধ হইছে মনে হইতেছে। বাট এগেইন, শেখ পরিবারের কোন সদস্যটা বেয়াদব!!
তো এইসব ভুংচাং ছাড়ো মামুরা। হুদাই ইতিহাসমূর্খ পাবলিকরে ভুজুং দিবা, তাগো মাথায় কাঠাল ভাইঙ্গা পাতা খাইবা। এইসবের দিন শেষ। বরং আসল নাগরের লগে যতো ছবি আছে, সেইগুলা ছাড়ো মার্কেটে:

বরং হ্যাডামে কুলাইলে আসল সখ্যতার ছবিগুলা দিও পাবলিকরে। তারা জানুক কি কঠিন পিরীত তোমাগো লগে আওয়ামী লীগের । স্যাম্পল দিলাম, ২৮ অক্টোবর লিখা সার্চ দিলে আরো পাইবা :


শেষ কথা: ছাগুগো দোষ আসলে কি দিমু! মওদুদী যা শিখাইছে গোলামরে, সে তাই শিখাইছে বাকিডিরে। কুফরি কালামের ওই কিতাবই এরা তোতাপাখীর মতো মুখস্ত করে আর উগড়ায়। নাইলে শেখ কামাল ১৯৭৬ সালে ব্যাংক ডাকাতি করছিলো ওইটা আর কোন নিরেট মস্তিষ্ক থিকা বের হবে। সেই কবে ফিরোজ কামালের বইয়ে একটা প্রিন্টিং মিস্টেক। সেই মিস্টেক এখনও জারি আছে!
নন-ছাগু পাঠক, সূত্র হিসেবে নিজের আর্টিকেলগুলা পইড়া নিয়েন, গিয়ান বাড়বে:
১. http://www.allaahuakbar.net/jamaat-e-islaami/maududi/brief_history_of_the_maududi_calamity.htm
২.http://publishing.cdlib.org/ucpressebooks/view?docId=ft9j49p32d&chunk.id=s1.7.19&toc.depth=1&toc.id=ch7&brand=ucpress
৩. http://www.thedailystar.net/forum/2007/march/marchtomarch.htm
৪.http://www.thedailystar.net/suppliments/2010/12/victory_day/countdown.html
৫. http://www.scribd.com/doc/100501938/Deobandi-Fatwa-Against-Mawdudi-and-Jamat-E-Islami

কৃতজ্ঞতা: অমি রহমান পিয়াল