এরিক প্রিবকের জন্ম ১৯১৩, মৃত্যু ২০১৩। বেঁচে ছিল পুরা একশ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যাটা ছিল এসএস পুলিশ বাহিনীর কাপ্তান। যুদ্ধের সময় গুনেগুনে ইতালির ৩৩৫ জন সাধারণ নাগরিককে হত্যার মূল কাণ্ডারি ছিলেন তিনি। ২৩শে মার্চ ১৯৪৪ এ ইতালিতে জার্মান বাহিনী স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। খণ্ড যুদ্ধে মারা যায় ৩২ জন জার্মান সেনা । হিটলারের কাছে খবর যাওয়া মাত্রই নির্দেশ আসে, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে প্রতি একটা জার্মান লাশের বিনিময়ে দশটা লাশ নামাতে। প্রিবকের উপর দায়িত্ব পরে ৩২০ জনের তালিকা করার। যুদ্ধ করে ৩২০ জনের লাশ না, জেলে বন্দী ইতালীয় নাগরিকদের দিয়ে তালিকা বানানো হয়। তালিকা করতে করতে আরও এক জার্মান সেনার মৃত্যু ঘটে। ৩২০ জনের তালিকাও বেড়ে ৩৩০ করতে হয় হিসেব মতো। জেলে বন্দী লোক দিয়ে তালিকা পূরণ না হওয়াতে বাসায় থাকা সাধারণ নাগরিকদের তালিকাতে ঢুকানো হয়। ৩৩০ জনের তালিকায় স্থানীয় যোদ্ধার সংখ্যা খুবই কম ছিল। বরং বেশিরভাগই বাসা থেকে জেরা করতে অথবা তেমন কোন কারণ ছাড়াই ধরে আনা কিশোর তরুণ বা বৃদ্ধ সাধারণ মানুষ। পরদিন যা হয় তা "Ardeatine caves massacre" নামে কুখ্যাত। বন্দীদের শহরের কাছে এক গুহাতে নিয়ে হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। প্রতি ধাপে পাঁচজন করে গুহাতে ঢুকানো হয়, গুলি করা হয়। একের পর এক দলকে ঢুকিয়ে একইভাবে চলতে থাকে। লাশের স্তূপ জমতে থাকে। হিসেবের কিছু গরমিল হয়ে দেখা যায় ৩৩০ জনের বদলে ৩৩৫ জনকে নিয়ে আসা হয়েছে। যাহা ৫২ তাহা তিপ্পান্ন বলে ওই ৩৩৫ জনকেই হত্যার নির্দেশ দেয় প্রিবকে। নিজ হাতে মারেন দুই জনকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রিবকে পালিয়ে চলে যান আর্জেন্টিনা। পাপ ঢাকতে ধর্মের গোসলের চেয়ে বড় গোসল আর নেই। প্রিবকে আবার নতুন করে ব্যাপ্টিজমে দীক্ষা নেয়। চার্চের এক বিশপের সাহায্যে পালায় আর্জেন্টিনাতে। সেখানে মুক্ত মানব হয়ে ঘুরে এক দুই বছর না, টানা পঞ্চাশ বছর! সব কিছু ভালোই চলছিল, লোকে তাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। প্রিবকে বিপদে পড়লো ১৯৯৪ সালে এবিসি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে। সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি কথা বলে সে, কিভাবে সব হল, কিভাবে নির্দেশ আসলো আর সে হত্যা করলো ৩৩৫ জন মানুষকে। তার কথায় কোন অনুতাপ নেই, কৃতকর্মের জন্য কোন অনুশোচনা নেই, কোন আবেগ নেই। তার এই নিরাবেগ সাক্ষাৎকার দেখে অনেক মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়লো। শুরু হল তাকে ইতালিতে ফিরিয়ে এনে বিচার করার জন্য আন্দোলন। প্রিবকের পক্ষের উকিল আর বন্ধুরা শুরু করলো নানা টালবাহানা। তারা একবার অজুহাত দেখায় যেহেতু এতদিন তার বিচার হয়নি তাই তার সব অপরাধ তামাদি হয়ে গেছে। আবার অজুহাত দেখায় সমস্ত কাগজপত্র আগে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করে দিতে হবে তারপর তাকে ইতালিতে ফিরিয়ে আনার আলাপ হবে। সতের মাস নানা টালবাহানা সামলানোর পর অবশেষে আর্জেন্টিনা সরকার প্রাইবকেকে ফেরত পাঠায় ইতালিতে। শুরু হয় বিচার।
তারপর এক বিরাট ইতিহাস। সেই একই রকম ইতিহাস। বিচার হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি ইত্যাদি তামাশা। প্রথম ধাপে প্রিবকে বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। কারণ দেখানো হয় সে হিটলারের আদেশ পালন করছিল মাত্র। কোর্ট হাউজের সামনে শুরু হয় বিক্ষুব্ধ জনতার আন্দোলন। প্রসিকিউটদের আপিলে আবারও তাকে হাজির করা হয় কোর্টে। নিজ হাতে যেই দুইজনকে মারেন সেই হত্যার জন্য এবার বিচার হয় তার। সেইসাথে হিটলারের নির্দেশ অনুসারে ৩৩০ জনের জায়গায় মারা হয় ৩৩৫জনকে, সেই পাঁচজন হত্যার দায় প্রিবকের উপর বর্তায়। দুই বছরের বিচারকার্য শেষে প্রাইবকেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বয়সের অজুহাত দেখিয়ে সেই পনের বছরকে দশ বছর করা হয়। আবারও শুরু হয় জনরোষ। আপিলের পর এবার ১০ বছরের জায়গায় তাকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়, তবে কারাদণ্ড নয় আরামদণ্ড! বয়সের অজুহাত দেখিয়ে তাকে জেলে না রেখে গৃহবন্দী করার আদেশ হয়।
ক্ষুব্ধ জনগণের আন্দোলন আর প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যায় প্রিবকের জীবন। ২০০৭ সালে কোর্ট প্রিবকে কে কাজ করার জন্য বাড়ি থেকে বের হবার অনুমতি দেয়! জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে কোর্ট আদেশ বদল করে আবার তাকে গৃহবন্দী করে। এরই মাঝে একদিন প্রিবকে একদিন সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলে। একশতম জন্মদিনে তার নাতি তাকে শ্যাম্পেন উপহার দিতে গিয়ে আবার পাবলিকের রোষের মুখে পড়ে। লোকজন আস্তে আস্তে অনেকে প্রিবকে কে ভুলে যায়। অনেকে ভুলতে পারেনা। অক্টোবর ২০১৩ তে প্রিবকের মৃত্যু হয়। সহজ সাধারণ বয়স জনিত মৃত্যু। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে যেন তার আর্জেন্টিনাতে তার স্ত্রীর পাশে সমাহিত করা হয়। আর্জেন্টিনা সরকার তার লাশ ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে। তার জন্ম যেই দেশে সে জার্মানিও তার লাশ নিতে রাজী হয়না। ভ্যাটিকান নিষেধাজ্ঞা জারি করে কোন ক্যাথোলিক চার্চে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার প্রতি। বিচ্ছিন্ন এক ছোট ক্যাথোলিক গ্রুপ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতে রাজী হয়।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় আবার শুরু হয় প্রতিবাদ। প্রিবকের প্রতি সহানুভূতিশীল গ্রুপের সাথে এতদিন ধরে প্রাইবেকের বিচার চেয়ে আসা গ্রুপের গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায়। গণ্ডগোলের মুখে শেষ পর্যন্ত প্রিবকের পরিবারের কেউ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যোগ দেয়ার সুযোগ পায়না। প্রতিবাদকারীদের একটাই দাবী, প্রিবকের লাশ ইতালির বুকে রাখা যাবে না। প্রচণ্ড রায়ট শুরু হয়ে যাওয়াতে ইতালি সরকার প্রিবকের লাশ সরিয়ে নিয়ে যায় মিলিটারি বেইজের ভেতর। শেষপর্যন্ত প্রিবকের লাশ কি সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয় না পুড়িয়ে দেয়া হয় না অন্য কিছু তা জানার উপায় নেই। সরকার জানিয়ে দেয় প্রিবকে কে এক অজানা স্থানে কবর দেয়া হয়েছে। সেই অজানা স্থান কোথায় সেটা তার পরিবারের কাউকেও জানানো হয়নি।
আমি উইকিপিডিয়াতে প্রিবকের এই কাহিনী বসে বসে পড়ি আর হাসি। প্রিবকের ট্রায়াল নিয়ে অনেক ইতালিয় নাগরিক এখনও ক্ষুব্ধ, ন্যায় বিচার পাওয়া যায়নি বলে। মন চায় ইতালিয়দের গিয়ে ওই জোকটা বলে সান্ত্বনা দেই, জঙ্গলে গিয়ে বানর দলের হাতে আটকা পড়ছে তিন লোক। তিনজনকে আদেশ করা হল জঙ্গলে গিয়ে কোন একটা ফল নিয়ে আসতে। প্রথমজন লিচু নিয়ে আসলো, বানর রাজ সেই লিচু ভরলো ওই লোকের ইয়েতে, দ্বিতীয়জন আম নিয়ে আসলো তার একই পরিণতি হল। কিন্তু দুইজনেই দাঁত কেলিয়ে খুশিতে হাসতে লাগলো। বানর রাজ ঝাড়ি দিয়ে বলল ব্যাটারা হাসস কেন। বলে আমরা আসার সময় দেখলাম তৃতীয়জন হেলতে দুলতে কাঁঠাল নিয়ে আসতেছে, এই দেখে হাসি।
এরিক প্রিবকে যদি লিচু হয় তবে গোলাম আযম কাঁঠাল। নাহ শুধু কাঁঠাল না, রীতিমতো কাঁঠাল গাছের বাগান। এরিক প্রিবকের বাপ এসে আমাদের আস্ত কাঁঠাল বাগান পুরে দিয়ে গেল। কত কত ৩৩০ এর তালিকা করে গেল, প্ল্যান করে গেল, মেরে গেল। তারপর প্রায় সেঞ্চুরি পূরণ করে বিছানায় বসে স্যুপ খেতে খেতে মরে গেল। এখন হয়তো অতীতের কথা ভুলে সামনে এগিয়ে যাবার আহ্বান আসবে। বিভক্তি ভুলে দেশের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার উপদেশ আসবে। গুরুজনকে সম্মান করার কথা আসবে। গালিগালাজ না করে যুক্তি দিয়ে মিষ্টি করে কথা বলার আহ্বান আসবে। ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা আসবে। সবাই বছর খানেকের মধ্যে গোলাম আযমের কথা ভুলে যাবে। কিন্তু গুটি কয়েক মানুষ হয়তো কখনোই ভুলতে পারবে না।
তিনশ কে দশ দিয়ে গুন করলে হয় তিন হাজার, একশ দিয়ে গুণ করলে তিরিশ হাজার, এক হাজার দিয়ে গুণ করলে তিন লাখ, দশ হাজার দিয়ে গুণ করলে তিরিশ লাখ।
গোলাম আযম কোন এরিক প্রিবকে ছিল না। গোলাম আযম হিটলার ছিল। গোলাম আযম কারো নির্দেশে হত্যা করেনি। তার নির্দেশে হত্যা হয়েছে। একশ দুইশ তিনশো হত্যা না, লাখের পর লাখ। চারিদিকের সুশীলেরা রক্ত পরিষ্কারের জন্য, ময়লা পরিষ্কারের জন্য এখন বিবৃতি দিয়েই যাবে দিয়েই যাবে। বলবে, মৃত্যু সবকিছুর ঊর্ধ্বে। মৃত মানুষের কোন পাপ থাকে না। কেউ বলবে, ঘৃণার চাষ করে কোন লাভ হয়না। ঘৃণা ফেলে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
শুধু অল্প কিছু মানুষ সেই ঘৃণা নিয়ে আজীবন বেঁচে থাকবে। অল্প কিছু মানুষ জানবে মৃত্যুতে কোন বদল হয়না। শুয়োর মরলে মানুষ হয়ে যায়না, শুয়োরই থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রিবকে পালিয়ে চলে যান আর্জেন্টিনা। পাপ ঢাকতে ধর্মের গোসলের চেয়ে বড় গোসল আর নেই। প্রিবকে আবার নতুন করে ব্যাপ্টিজমে দীক্ষা নেয়। চার্চের এক বিশপের সাহায্যে পালায় আর্জেন্টিনাতে। সেখানে মুক্ত মানব হয়ে ঘুরে এক দুই বছর না, টানা পঞ্চাশ বছর! সব কিছু ভালোই চলছিল, লোকে তাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। প্রিবকে বিপদে পড়লো ১৯৯৪ সালে এবিসি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে। সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি কথা বলে সে, কিভাবে সব হল, কিভাবে নির্দেশ আসলো আর সে হত্যা করলো ৩৩৫ জন মানুষকে। তার কথায় কোন অনুতাপ নেই, কৃতকর্মের জন্য কোন অনুশোচনা নেই, কোন আবেগ নেই। তার এই নিরাবেগ সাক্ষাৎকার দেখে অনেক মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়লো। শুরু হল তাকে ইতালিতে ফিরিয়ে এনে বিচার করার জন্য আন্দোলন। প্রিবকের পক্ষের উকিল আর বন্ধুরা শুরু করলো নানা টালবাহানা। তারা একবার অজুহাত দেখায় যেহেতু এতদিন তার বিচার হয়নি তাই তার সব অপরাধ তামাদি হয়ে গেছে। আবার অজুহাত দেখায় সমস্ত কাগজপত্র আগে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করে দিতে হবে তারপর তাকে ইতালিতে ফিরিয়ে আনার আলাপ হবে। সতের মাস নানা টালবাহানা সামলানোর পর অবশেষে আর্জেন্টিনা সরকার প্রাইবকেকে ফেরত পাঠায় ইতালিতে। শুরু হয় বিচার।
তারপর এক বিরাট ইতিহাস। সেই একই রকম ইতিহাস। বিচার হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি ইত্যাদি তামাশা। প্রথম ধাপে প্রিবকে বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। কারণ দেখানো হয় সে হিটলারের আদেশ পালন করছিল মাত্র। কোর্ট হাউজের সামনে শুরু হয় বিক্ষুব্ধ জনতার আন্দোলন। প্রসিকিউটদের আপিলে আবারও তাকে হাজির করা হয় কোর্টে। নিজ হাতে যেই দুইজনকে মারেন সেই হত্যার জন্য এবার বিচার হয় তার। সেইসাথে হিটলারের নির্দেশ অনুসারে ৩৩০ জনের জায়গায় মারা হয় ৩৩৫জনকে, সেই পাঁচজন হত্যার দায় প্রিবকের উপর বর্তায়। দুই বছরের বিচারকার্য শেষে প্রাইবকেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বয়সের অজুহাত দেখিয়ে সেই পনের বছরকে দশ বছর করা হয়। আবারও শুরু হয় জনরোষ। আপিলের পর এবার ১০ বছরের জায়গায় তাকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়, তবে কারাদণ্ড নয় আরামদণ্ড! বয়সের অজুহাত দেখিয়ে তাকে জেলে না রেখে গৃহবন্দী করার আদেশ হয়।
ক্ষুব্ধ জনগণের আন্দোলন আর প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যায় প্রিবকের জীবন। ২০০৭ সালে কোর্ট প্রিবকে কে কাজ করার জন্য বাড়ি থেকে বের হবার অনুমতি দেয়! জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে কোর্ট আদেশ বদল করে আবার তাকে গৃহবন্দী করে। এরই মাঝে একদিন প্রিবকে একদিন সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলে। একশতম জন্মদিনে তার নাতি তাকে শ্যাম্পেন উপহার দিতে গিয়ে আবার পাবলিকের রোষের মুখে পড়ে। লোকজন আস্তে আস্তে অনেকে প্রিবকে কে ভুলে যায়। অনেকে ভুলতে পারেনা। অক্টোবর ২০১৩ তে প্রিবকের মৃত্যু হয়। সহজ সাধারণ বয়স জনিত মৃত্যু। তার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে যেন তার আর্জেন্টিনাতে তার স্ত্রীর পাশে সমাহিত করা হয়। আর্জেন্টিনা সরকার তার লাশ ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে। তার জন্ম যেই দেশে সে জার্মানিও তার লাশ নিতে রাজী হয়না। ভ্যাটিকান নিষেধাজ্ঞা জারি করে কোন ক্যাথোলিক চার্চে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার প্রতি। বিচ্ছিন্ন এক ছোট ক্যাথোলিক গ্রুপ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতে রাজী হয়।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় আবার শুরু হয় প্রতিবাদ। প্রিবকের প্রতি সহানুভূতিশীল গ্রুপের সাথে এতদিন ধরে প্রাইবেকের বিচার চেয়ে আসা গ্রুপের গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায়। গণ্ডগোলের মুখে শেষ পর্যন্ত প্রিবকের পরিবারের কেউ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যোগ দেয়ার সুযোগ পায়না। প্রতিবাদকারীদের একটাই দাবী, প্রিবকের লাশ ইতালির বুকে রাখা যাবে না। প্রচণ্ড রায়ট শুরু হয়ে যাওয়াতে ইতালি সরকার প্রিবকের লাশ সরিয়ে নিয়ে যায় মিলিটারি বেইজের ভেতর। শেষপর্যন্ত প্রিবকের লাশ কি সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয় না পুড়িয়ে দেয়া হয় না অন্য কিছু তা জানার উপায় নেই। সরকার জানিয়ে দেয় প্রিবকে কে এক অজানা স্থানে কবর দেয়া হয়েছে। সেই অজানা স্থান কোথায় সেটা তার পরিবারের কাউকেও জানানো হয়নি।
আমি উইকিপিডিয়াতে প্রিবকের এই কাহিনী বসে বসে পড়ি আর হাসি। প্রিবকের ট্রায়াল নিয়ে অনেক ইতালিয় নাগরিক এখনও ক্ষুব্ধ, ন্যায় বিচার পাওয়া যায়নি বলে। মন চায় ইতালিয়দের গিয়ে ওই জোকটা বলে সান্ত্বনা দেই, জঙ্গলে গিয়ে বানর দলের হাতে আটকা পড়ছে তিন লোক। তিনজনকে আদেশ করা হল জঙ্গলে গিয়ে কোন একটা ফল নিয়ে আসতে। প্রথমজন লিচু নিয়ে আসলো, বানর রাজ সেই লিচু ভরলো ওই লোকের ইয়েতে, দ্বিতীয়জন আম নিয়ে আসলো তার একই পরিণতি হল। কিন্তু দুইজনেই দাঁত কেলিয়ে খুশিতে হাসতে লাগলো। বানর রাজ ঝাড়ি দিয়ে বলল ব্যাটারা হাসস কেন। বলে আমরা আসার সময় দেখলাম তৃতীয়জন হেলতে দুলতে কাঁঠাল নিয়ে আসতেছে, এই দেখে হাসি।
এরিক প্রিবকে যদি লিচু হয় তবে গোলাম আযম কাঁঠাল। নাহ শুধু কাঁঠাল না, রীতিমতো কাঁঠাল গাছের বাগান। এরিক প্রিবকের বাপ এসে আমাদের আস্ত কাঁঠাল বাগান পুরে দিয়ে গেল। কত কত ৩৩০ এর তালিকা করে গেল, প্ল্যান করে গেল, মেরে গেল। তারপর প্রায় সেঞ্চুরি পূরণ করে বিছানায় বসে স্যুপ খেতে খেতে মরে গেল। এখন হয়তো অতীতের কথা ভুলে সামনে এগিয়ে যাবার আহ্বান আসবে। বিভক্তি ভুলে দেশের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার উপদেশ আসবে। গুরুজনকে সম্মান করার কথা আসবে। গালিগালাজ না করে যুক্তি দিয়ে মিষ্টি করে কথা বলার আহ্বান আসবে। ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা আসবে। সবাই বছর খানেকের মধ্যে গোলাম আযমের কথা ভুলে যাবে। কিন্তু গুটি কয়েক মানুষ হয়তো কখনোই ভুলতে পারবে না।
তিনশ কে দশ দিয়ে গুন করলে হয় তিন হাজার, একশ দিয়ে গুণ করলে তিরিশ হাজার, এক হাজার দিয়ে গুণ করলে তিন লাখ, দশ হাজার দিয়ে গুণ করলে তিরিশ লাখ।
গোলাম আযম কোন এরিক প্রিবকে ছিল না। গোলাম আযম হিটলার ছিল। গোলাম আযম কারো নির্দেশে হত্যা করেনি। তার নির্দেশে হত্যা হয়েছে। একশ দুইশ তিনশো হত্যা না, লাখের পর লাখ। চারিদিকের সুশীলেরা রক্ত পরিষ্কারের জন্য, ময়লা পরিষ্কারের জন্য এখন বিবৃতি দিয়েই যাবে দিয়েই যাবে। বলবে, মৃত্যু সবকিছুর ঊর্ধ্বে। মৃত মানুষের কোন পাপ থাকে না। কেউ বলবে, ঘৃণার চাষ করে কোন লাভ হয়না। ঘৃণা ফেলে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
শুধু অল্প কিছু মানুষ সেই ঘৃণা নিয়ে আজীবন বেঁচে থাকবে। অল্প কিছু মানুষ জানবে মৃত্যুতে কোন বদল হয়না। শুয়োর মরলে মানুষ হয়ে যায়না, শুয়োরই থাকে।